তারাবির নামাজের হুকুম - তারাবির নামাজের ফজিলত ২০২৩

প্রিয় পাঠক আজ আমি আপনাদের মাঝে তারাবি নামাজের হুকুম সম্পর্কে আলোচনা করব। অনেকেই জানে না যে তারাবি নামাজের হুকুম কি। আমরা সবাই জানি যে প্রতি বছর রমজান মাসে তারাবির নামাজ পড়া হয়। আল্লাহতালা মুসলিমদের জন্য রমজান মাস সর্বশ্রেষ্ঠ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তাই এই রমজান মাস মুসলিম উম্মতের জন্য গুনাহ মাফ ও রহমতের মাস।

তারাবির নামাজের হুকুম - তারাবির নামাজের ফজিলত ২০২৩

তারাবি নামাজের হুকুম সম্পর্কে আজকে আপনাদের মাঝে সঠিক তথ্য দিয়ে সাহায্য করবো তাই আর দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক, তারাবি নামাজের হুকুম কি এবং তারাবির নামাজের ফজিলত সমূহগুলো।

পোস্ট সূচিপত্রঃ তারাবির নামাজের হুকুম - তারাবির নামাজের ফজিলত ২০২৩

তারাবির নামাজের হুকুম

রমজান মাসে এশার নামাজের পর আদায়কৃত সুন্নত নামাজ তারাবি নামে পরিচিত। তারাবি কথাটি আরবি শব্দ। তারাবি তার বহুবচন, যার অর্থ ক্ষণিক বিশ্রাম। রমজানের এই নামাজে পতি চার রাকাতের পর কিছু সময় অর্থাৎ চার রাকাত নামাজের সমপরিমাণ সময় বিলম্ব ও বিশ্রামের নিয়ম থাকাই এই নামাজে এরুপ নামকরণ করা হয়েছে। আর এই জন্য এই সময়টাকে তারাবি নামাজের হুকুম বলে প্রমাণিত।

তারাবি ২০ রাকাত সুন্নত। হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত যে, রাসুল সাঃ রমজান মাসে ২০ রাকাত এবং বেতের পড়তেন। আর তাই সমস্ত সাহাবীদের আমলে ২০ রাকাত ছিল। রাসূল সাঃ এর নাতি হযরত ইবনে হাসান রা থেকে বর্ণিত হযরত ওমররা এর নির্দেশে লোকদেরকে নিয়ে উবাই বিন কাবরা ২০ রাকাত তারাবি পড়েছেন। (আবু দাউদঃ১/২০২) আর এভাবেই খলিফা ওমর, ওসমান, আলী রা সহ সকল সাহাবীদের ঐক্যমতে ২০ রাকাত তারাবি পড়া হয়।

তারাবির নামাজের ফজিলত

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, হে আমার উম্মতগণ তোমরা জেনে রেখো আল্লাহ তোমাদের উপর রমজানের রোজা ফরজ করেছেন এবং উহার রাত্রে তারাবির নামাজ সুন্নত করেছেন। আর তাই যে ব্যাক্তি খালেস নিয়তে ঈমানের সাথে কেবল সওয়াবের আশায় এই মাসে দিনের বেলায় রীতিমত রোজা রাখবে এবং রাত্রিতে রীতিমতো তারাবির নামাজ পড়বে তার জন্য পূর্বের গুনাহ মাপ করে দেওয়া হবে। (বুখারী, হাঃ ৩৬,৩৭) তাহলে এ থেকেই বোঝা যায় যে তারাবি নামাজের ফজিলত কি

আরো পড়ুনঃ যাকাত কি - যাকাত কত প্রকার ও কি কি

আর তাই এই পবিত্র মাসে অধিক নেকি সঞ্চয় করা উচিত। এ মাসের একটি ফরজ অন্য মাসের 70 টি ফরজের সমান নেকি পাওয়া যায়। এজন্য আমরা ফরজ রোজা করবো এবং ২০ রাকাত তারাবির সুন্নত নামাজ আদায় করব।

তারাবির নামাজের সময়

আমরা অনেকেই হয়তো জানি না যে তারাবি নামাজের সময় কখন এবং কিভাবে পড়তে হয়। চলুন জেনে নেওয়া যাক তারাবির নামাজের সময় কখন, যে রাতে রমজানের চাঁদ দেখা যাবে সে রাত থেকে তারাবির নামাজ শুরু করতে হবে। ঈদুল ফিতরের চাঁদ দেখা গেলে তারাবি বন্ধ করতে হবে। তারাবির নামাজের সময় এশার নামাজের পর থেকে শুরু হয় এবং ফজরের সময় হওয়া পর্যন্ত সময় থাকে। কিন্তু যদি কেউ এশার নামাজের পূর্বে তারাবি পড়ে তাহলে তার তারাবির হবে না।

তারাবির নামাজের জামাত

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম রমজানের তিন রাকাত যথা ২৩, ২৫ এবং ২৭ শে রাত তারাবি নামাজ জামাতে পড়েছিলেন। তারপর তিনি যখন সাহাবীদের মধ্যে বিরাট উৎসাহের উদ্দীপনা অনুরাগ দেখলেন তখন মসজিদে এলেন না। সাহাবীগণ তখন তার দরজায় আওয়াজ দিতে লাগলেন। তখন মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন আল্লাহ তোমাদের উৎস ও উদ্দীপনায় আরো বরকত দিন। আমি এ আশঙ্কায় মসজিদে যায়নি যে এই নামাজ তোমাদের ওপর ফরজ হয়ে না যায় এবং সর্বদা তোমরা তা পালন করতে না পারো। কারণ নফল নামাজ ঘরে পড়াতে বেশি সওয়াব ও বরকতের কারণ হয়।

তাহলে এ থেকে বোঝা যায় যে তারাবি নামাজের জামাত কখন এবং কিভাবে পড়তে হয়। একটি হাদিস থেকে প্রমাণিত হয়, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম তিন রাকাত জামাতের পর ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর রা. রীতিমতো জামাত কায়েম করেন এবং সাহাবায়ে কিরাম তা মেনে নেন। পরবর্তীকালে কোন খলিফায় এই সুন্নতের বিরোধিতা করতে পারেননি বা করেননি। এজন্য আলেম সমাজ এ নামাজকে সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ কিফায়া বলেছেন।

তারাবির নামাজের মাসয়ালা

তারাবি নামাজের মাসয়ালা রয়েছে। চলুন খুব সহজেই জেনে নেওয়া যাক তারাবি নামাজের মাসয়ালা গুলো কি কি যথাঃ 

১. তারাবি নামাজের নিয়ত এমনভাবে করতে হবে যে আমি দুই রাকাতের সুন্নত তারাবি নামাজের নিয়ত করছি। এমনিভাবে ১০ সালাম সহ ২০ রাকাত নামাজ পুরা করতে হবে।

২. তারাবি নামাজের পর বেতেরের নামাজ পড়া উত্তম। কিন্তু কোন কারণে যদি কিছু তারাবি পড়ার পূর্বে অথবা সমস্ত তারাবি পড়ার পূর্বে বেতের নামাজ পড়াও জায়েজ বলে ধরা হয়।

৩. যদি কোন মুক্তাদির বিলম্বে নামাজে যোগ দেবার কারণে তার কিছু তারাবি বাকি থাকতে ইমাম বেতেরের নামাজের জন্য দাঁড়ালেন, এ ক্ষেত্রে ওই ব্যক্তির উচিত হবে ইমামের সাথে বেতের নামাজ পড়া এবং তারপর বাদ পড়া তারাবি পড়া।

আরো পড়ুনঃ কোরবানি কি - কোরবানির ইতিহাস - কোরবানি ঈদ ২০২৩ সম্পর্কে জেনে নিন

৪. চার রাকাত পড়ার পর এতো সময় পর্যন্ত বিশ্রাম নেওয়া মুস্তাহাব যত সময়ে চার রাকাত পড়া হয়েছে।

৫. যদি এশার ফরজ না পড়ে তারাবিতে শরিক হয় তাহলে তার তারাবির দূরত্ব হবে না।

৬. যদি কেউ এশার ফরজ জামায়াতে পড়ল এবং তারাবি জামায়াতে পড়ল না সেও বেতেরের নামাজ জামাতে পড়তে পারবে।

৭. যদি কেউ এশার ফরজ জামাতে পড়লো না। সেই ব্যক্তি তারাবি ও বিতরের নামাজ জামাতে পড়তে কোন বাধা নেই।

৮. বিনা কারণে বসে বসে তারাবি নামাজ পড়া মাকরুহ হবে।

৯. ফরজ ও বেতেরের জন্যএক ইমাম এবং তারাবির জন্য অন্য ইমাম পড়াতে পারে কোন সমস্যা নেই

১০. তারাবির দ্বিতীয় রাকাতে বসার পরিবর্তে ইমাম দাঁড়িয়ে গেলে, যদি তৃতীয় রাকাতে সিজদার পূর্বে তার মনে পড়ে যায় অথবা কোন মুক্তাদী মনে করিয়ে দেয় তাহলে ইমামের উচিত বসে যাওয়া এবং তাশাহুদ পড়ে এক সালাত ফিরিয়ে সিজদায় সাহু দেওয়া এরপর নামাজ পুরা করে সালাম ফেরানো। আর যদি দ্বিতীয় রাকাতের সিজদা করার পর মনে পড়ে তাহলে এক রাকাতের সাথে মিলিয়ে চার রাকাত পূরণ করতে হবে।

১১. যারা এশার নামাজ জামাতে পড়েননি, তাদের জন্য তারাবি জামাতে পড়া দুরস্থ নয়।

১২. কেউ যদি মসজিদে এমন সময়ে পৌঁছে যখন এশার ফরজ হয়ে গেছে, তাহলে প্রথমে এসে তার উচিত হবে এশার ফরজ পড়া এবং পরে তারাবিতে শরিক হওয়া। তারাবির যেসব রাকাত বাদ যাবে সেগুলো হয় বিরতির সময় পড়ে নেবে অথবা জামাতে বেতের পড়ার পর পড়ে নিবে।

১৩. তারাবীতে কোরআন পড়ার নিয়ম হলো, কোন সূরায় বিসমিল্লা উচ্চস্বরে পড়তে হবে।

১৪. কোরআন খতম করার পর সঙ্গে সঙ্গে পুনরায় কুরআন শুরু করা সুন্নাত।

তাহলে আমরা খুব সহজেই তারাবি নামাজের মাসয়ালা সম্পর্কে জানতে পারলাম এবং একই সাথে জানতে পারলাম যে তারাবি নামাজের হুকুম ও তারাবি নামাজের ফজিলত সমূহ গুলো কি কি। এখন জানব তারাবি নামাজের কোরআন খতম এর নিয়ম

তারাবির নামাজে কুরআন খতম

পবিত্র রমজান মাসে একবার কোরআন ক্রমানুসারে খতম করা সুন্নতে মক্কাদাহ। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতিবছর রমজান মাসে জিব্রাইল আলাই সালামকে পুরা কোরানুল মাজীদ পড়ে শোনাতেন। যে বছর তিনি দুনিয়া থেকে বিদায় নেই সেই বছর তিনি জিব্রিল আঃ কে দুইবার কোরআন শুনিয়েছিলেন।

আরো পড়ুনঃ হজ্জের ফরজ কয়টি - হজ্জের প্রকারভেদ ২০২৩

রমজান মাসের সুন্নতগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো কোরআন মাজীদ তেলাওয়াত ও তারাবির নামাজ পড়া। হযরত আবু হুরাইরা হতে বর্ণিত হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর বাণী হলো যে ব্যাক্তি ইমামের সঙ্গে সবের উদ্দেশ্যে রমজান মাসে তারাবি নামাজ পড়বে তার অতীতের গুনাহ সহ সকল গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।

তারাবি নামাজে কুরআন খতম সোয়াবের অন্যতম মাধ্যম। কারণ রমজান মাস কুরআন নাযিলের মাস। আর তাই শবে কদরে কোরআন নাজিলের আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়ে ছিল। নবী করিম সাঃ রমজান মাসে পুরো কোরআন শরীফ হযরত জিব্রাইল আলাই সালামকে একবার শুনাতেন এবং জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম ও নবী করীম সাল্লাহু সাল্লাম কে পূর্ণ কোরান একবার শোনাতেন যা ইতিপূর্বেই বলেছি। আর এজন্য যদি কেউ প্রতিদিন একপারা করে কোরআন তেলোয়াত করে তাহলে রমজানে তার কোরআন খতম হবে।

এজন্য সবার উচিত রমজান মাসে প্রতিদিন একপারা করে কোরআন পড়া। প্রতিদিন নিয়মিত এক পারা করে কোরআন পড়লে খতম করা যায়। আর প্রতি তারাবি নামাজে কুরআন খতম দেওয়া যায়।

সর্বশেষ কথা তারাবি নামাজের হুকুম তারাবি নামাজের ফজিলত তারাবি নামাজের মাসয়ালা সমস্ত কিছু নিয়ে আলোচনা করা হলো। এমন নতুন নতুন পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েব সাইটে নিয়মিত ভিজিট করুন এবং আমাদের সাথেই থাকুন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

নিউ বাংলা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url