ফিতরা কি - সাদাকাতুল ফিতর আদায় করা কি ওয়াজিব ২০২৩

প্রিয় পাঠক আপনি কি জানেন ফিতরা কি? ফিতরা কার জন্য এবং কিভাবে ফিতরা দিতে হয় তার সমস্ত কিছু আজকের পোস্ট জুড়ে আলোচনা করা হবে। ফিতরা কি সেই সম্পর্কে আমরা অনেকেই হয়তো জানি না এবং ফিতরা কিভাবে প্রদান করতে হয় কত টাকা দিতে হয় তার সকল কিছু আজকে আমরা এই আলোচনার মাধ্যমে জানতে পারবো।

ফিতরা কি - সাদাকাতুল ফিতর আদায় করা কি ওয়াজিব ২০২৩

ফিতরা কি? এ বিষয়ে অনেকের কাছে জানতে চাওয়া হলে কেউ কেউ এটাকে ফরজ বা ওয়াজিবের সাথে মিলিয়ে ফেলে আর এই জন্য সমস্ত চিন্তার অবসান ঘটিয়ে ফিতরা কি তার সকল কিছু পরিষ্কারভাবে এই পোস্ট জুড়ে আলোচনা করা হবে তাই ধৈর্য সহকারে আমাদের পোস্টটি পড়তে থাকুন।

ফিতরা কি

ফিতরা মূলত রোজার একটি যাকাত। যাকাত যেমন ধন-সম্পদকে পবিত্র করে তোলে তেমনি ভাবে ফিতরা ও রোজার মাধ্যমে যে সকল ত্রুটি থাকে তার দূর করে। সাদকায়ে ফিতর ফরজ না হওয়া ওয়াজিব তা মতভেদ রয়েছে। কিন্তু আদায়ের আবশ্যকতা যে অলঙ্গনীয় তাতে কোন সন্দেহ নেই।

ফিতরা কি এই সম্পর্কে ইবনে ওমর (রা.) হতে বর্ণিত যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলমান দাস-দাসী ও স্বাধীন নর নারীর ওপর এক্ষা পরিমান খেজুর বা জব রমজান মাসে সাদাকায়ে ফিতর নির্ধারণ করেছিলেন। ইসলামী অনুশাসনের এক অনন্য নিদর্শন হলো ফিতরা। সাদাকাদুলফিতর দ্বিতীয় হিজরির শাবান মাসে বিধিবদ্ধ করা হয়। আর এটি অসহায় গরিবের দুঃখীর ন্যায্য পাওনা হিসেবে পরিগণিত। রমজান ফিতরা সদাকা ঈদ একই সূত্রে গাথা। এছাড়া ফিতরার মধ্যে রয়েছে গরিব অসহায় সুবিধা বঞ্চিত প্রতিবেশীর আনন্দ ঈদ উৎসব। আর এই জন্যই রমজান মাসে ঈদের আগে ফিতরা আদায় করা উত্তম। তাহলে প্রিয় বন্ধুরা আমরা জানতে পারলাম যে ফিতরা কি এবং কিভাবে এর পালন করা উচিত।

ফিতরা বা সাদাকাতুল ফিতর হল সেই নির্ধারিত সদকা যা ঈদের নামাজের আগে অসহায় এবং গরিব দুস্থ ও সুবিধা বঞ্চিত মানুষদের মধ্যে দেওয়া। আর এটি কে যাকাতুল ফিতর ও বলা হয়। ঈদের দিন সকালেও যদি কারো কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদের সাড়ে সাত ভরি সোনা বা সারে ৫২ ভরি রুপা বা সমমূল্যের ব্যবসা পূর্ণ থাকে তবে তাকে তার নিজের ও পরিবারের ছোট বড় সবার পক্ষ থেকে ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব।

সাদাকাতুল ফিতর আদায় করা কি ওয়াজিব

ফিতর মানে হলো রোজা ছাড়া অর্থাৎ যার রমজানের কারণে আদায় করতে হয়। যেহেতু ফিতরের মাধ্যমে মানুষ তার পালনীয় রোজার যাবতীয় খাত গুলো ভুলগুলো থেকে আত্মশুদ্ধি ও আত্মার আমূলকে নির্মূল করার জন্য অসহায়দের মাঝে দেওয়া আবশ্যক আর তাই এর নামকরণ করা হয় ফিতরা। কিন্তু আমরা সাদাকাতুল ফিতর আদায় করা কি ওয়াজিব নাকি সুন্নত নাকি ফরজ এ নিয়ে অনেকের রয়েছে।

আর তাই আমরা ফিতরার সকল বিষয় সম্পর্কে জানব ইতিমধ্যেই আমরা জানতে পেরেছি যে ফিতরা কি এবং এখন আমরা ফিতর আদায় করা কি ওয়াজিব এই সম্পর্কে জানব। ফিতরা কি এই সম্পর্কে ইবনে ওমর (রা.) হতে বর্ণিত যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলমান দাস-দাসী ও স্বাধীন নর নারীর ওপর এক্ষা পরিমান খেজুর বা জব রমজান মাসে সাদাকায়ে ফিতর নির্ধারণ করেছিলেন।

বিভিন্ন হাদিসের ভিত্তিতে ফিতরার শরয়ী হুকুম সম্পর্কে ইমামদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে, ইমাম শাফেয়ী ও আহমেদের মতে ফিতরা ফরজ। ইমাম আবু হানিফার মতে ফিতরা ওয়াজিব। ইমাম মালিক এবং কোন কোন ইরাকি ও কিছু সংখ্যক সাফেয়ির মতে ফিতরাস সুন্নাতে মুয়াক্কাদা।

এছাড়াও হাদিস থেকে আরও প্রমাণিত হয় যে রমজান অতিবাহিত হলে ফিতরা করা ওয়াজিব। আর এই জন্য ইমাম শাফেয়ী বলেছেন, রমজানের শেষ দিনের সূর্যাস্তের পর ফিতরা করা ফরজ। তবে আবু হানিফা বলেছেন ঈদুল ফিতরের দিন সূর্যোদয় থেকে ফিতরা করা ওয়াজিব।

সাদাকাতুল ফিতর আদায় করা কি ওয়াজিব নাকি ফরজ তা নিয়ে মতভেদ থাকলেও ফিতরা দিতে হবে কিনা সে ব্যাপারে কারো কোন দ্বিমত নেই তাই আবশ্যক পালনীয় মনে করে ফিতরা দেওয়া উত্তম।

সদকা দানের গুরুত্ব

ইসলাম ধর্মে দান বা সদকার গুরুত্ব অপরিসীম। দান করার জন্য ধনী হওয়ার প্রয়োজন নেই, মন থেকে সুন্দর ইচ্ছা পোষণ করাই শ্রেয়। দান শুধু অথবা সম্পদ প্রদানের সীমাবদ্ধ নয় কারো শুভকামনা সুন্দর ব্যবহার থেকে অনিষ্টকারী বস্তুর সরিয়ে ফেলা এসব জাতীয় সব কর্মই দান। তাহলে ফিতরা কি সেই সম্পর্কে আমরা অনেকটাই জানতে পেরেছি। দানের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে পবিত্র কোরআন এবং হাদীস শরীফে কথাগুলো আমরা আজকে জেনে নেই। মহান আল্লাহ তা'আলা বলেন, হে মুমিনগণ! তোমরা তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি যেন তোমাদের আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল না করে। যারা এ কারণে গাফেল হয় তারাই তোর সর্বাগ্রে ক্ষতিগ্রস্ত। এবং আল্লাহতালা বলেছেন,আমি তোমাদের যা দিয়েছি তা থেকে মৃত্যু আসার আগেই ব্যয় কর। অন্যথায় সে বলবে, হে আমার পালনকর্তা আমাকে আরো কিছুকাল অবকাশ দিলেন না কেন? তাহলে আমি সদকা করতাম এবং সৎকর্মীদের অন্তর্ভুক্ত হতাম। (সূরা মুনাফিকুন, আয়াত নংঃ ৯-১০)

আর ব্যয় কর তুমি আল্লাহর পথে তবে নিজের জীবনকে ধ্বংসের মুখোমুখি করো না। আর মানুষের প্রতি অনুগ্রহ করো আল্লাহ অনুগ্রহকারীদের ভালবাসেন।(সূরা বাকারাহ আয়াতঃ ১৯৫)

আর যদি তোমরা প্রকাশ্যে দান খয়রাত করো, তবে তা কতই না উত্তম। কিন্তু যদি দান করো গোপনে এবং অভাবগ্রস্তদের দিয়ে দাও তবে তা তোমাদের জন্য আরও বেশি উত্তম হবে। আল্লাহ তায়ালা তোমাদের কিছু গুনাহ দূর করে দেবেন আল্লাহ তোমাদের কাজকর্মের খুব খবর রাখেন। এ থেকে বোঝা যায় যে সদকা দানের গুরুত্ব কেমন!

আর যারা স্বীয় ধন সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে, এরপর ব্যয় করার পর সে অনুগ্রহের কথা প্রকাশ করে না এবং কষ্ট দেয় না তাদেরই জন্য তাদের পালনকর্তার কাছে রয়েছে বিশেষ পুরস্কার। আল্লাহ তাআলা আরো বলেন, শয়তান তোমাদের অভাব অনটনের ভয় দেখায় এবং অশ্লীলতার আদেশ দেয় আর আল্লাহ তা'আলা দান করার বিনিময়ে ক্ষমা করা ও সম্পদ বৃদ্ধি করার ওয়াদা করেন। বস্তুত আল্লাহ পাক সমৃদ্ধশালী সর্বজ্ঞানী।

হযরত আবু হুরায়রা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম হতে কয়েকটি হাদিস বর্ণনা করেছিলেন, তা হলো তিনি বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তাআলা আমাকে বলেছেন খরচ করো তোমার ওপর ও খরচ করা হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন, আল্লাহ তায়ালার হাত আরো  প্রাচুযে পরিপূর্ণ রয়েছে। রাত দিন ব্যয় করা সত্ত্বেও তা মোটেও কমছে না কারণ একটু ভেবে দেখো আসমান জমিন সৃষ্টি থেকে এ পর্যন্ত যে বিপুল পরিমাণ ব্যয় করেছেন এতে তার হাত একটুও খালি হয়নি। তিনি আরো বলেন আল্লাহ আরশ পানির উপর এবং তার অপর হাতে রয়েছে মৃত্যু যাকে ইচ্ছা করেন ওপরে ওঠান ও উন্নত করে। আর যাকে চান নিচু করে এবং অবনতি ঘটায়।

আর তাই আমাদের সবার উচিত গরিব-দুঃখী অভাবী আত্মীয়-স্বজন প্রতিবেশী এবং সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের পাশে দাঁড়ানো এবং বেশি বেশি ফিতরা বা সাদিকা দান করা। এ থেকে আমরা বুঝতে পারলাম ফিতরা কি? সাদাকাতুল ফিতর আদায় করা কি ওয়াজিব? এবং সবশেষে, সদকা দানের গুরুত্ব সম্পর্কে জানলাম।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

নিউ বাংলা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url