ডায়াবেটিস কমানোর উপায় - ডায়াবেটিস এর লক্ষণ - ডায়াবেটিস কি কারনে হয়

আপনি কি দীর্ঘদিন যাবত ডায়াবেটিস কমানোর উপায় সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? অনেকের কাছে প্রশ্ন করেও ডায়াবেটিস কমানোর উপায় সম্পর্কে সঠিক উত্তর পাচ্ছেন না? তাহলে আর দেরি না করে আজকের পোস্টটি আপনাদের জন্যই তৈরি করা কারণ আজকে আমরা ডায়াবেটিস কমানোর উপায় এবং ডায়াবেটিস এর লক্ষণ ডায়াবেটিস কি কারনে হয় এই সকল বিষয় নিয়ে কথা বলব।

ডায়াবেটিস কমানোর উপায় - ডায়াবেটিস এর লক্ষণ - ডায়াবেটিস কি কারনে হয়

আপনার শরীরে ডায়াবেটিস হয়েছে বলে দুশ্চিন্তার কোন কারণ নেই। আপনি যদি যথাযথ চিকিৎসা ও সুশৃংখল জীবনযাপনের মাধ্যমে এই রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। আর এই জন্য ডায়াবেটিস কমানোর উপায় হিসেবে প্রথমেই আপনাকে ডায়াবেটিস এ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে শৃংখলাময় জীবন যাপন করতে হবে।

পোস্ট সূচীপত্রঃ ডায়াবেটিস কমানোর উপায় - ডায়াবেটিস এর লক্ষণ - ডায়াবেটিস কি কারনে হয়

ডায়াবেটিস কি

সারা বিশ্বে দিন দিন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। আমরা যেসব খাদ্য প্রতিনিয়ত গ্রহণ করি তা শর্করা জাতীয় অংশ পরিপাকের পড়ে সিংহভাগ গ্লোকোজ হিসেবে রক্তে প্রবেশ করে থাকে। আর এই দেহকোষ গুলি প্রয়োজনীয় শক্তি উৎপাদনের জন্য গ্লুকোজ গ্রহণ করে থাকে। আমাদের শরীরে অধিকাংশ দেহকোষই এই গ্লুকোজ গ্রহণের জন্য ইনসুলিন নামক একপ্রকার হরমোনের উপর নির্ভরশীল। আর ডায়াবেটিস হলো মূলত এক ধরনের ইনসুলিন সমস্যা জনিত রোগ।

আরো পড়ুনঃ হস্ত মৈথুন থেকে বাচার উপায় - হস্তমৈথুন করলে কি হয় ২০২৩

সাধারণত এই ডায়াবেটিস রোগের জন্য বংশগত ও পরিবেশের অভাব দুটোই দায়ী। কোন কোন বিশেষ অসুখ থেকেও ডায়াবেটিসের সৃষ্টি হতে পারে। ডায়াবেটিস হলে শরীরের শর্করা ও অন্যান্য খাবার সঠিকভাবে শরীরের কাজে আসে না এবং বিঘ্ন ঘটায়। ডায়াবেটিস হলে অগ্নাশয় থেকে প্রয়োজনমতো কার্যকরী ইনসুলিন নামের নিঃসরণ হয় এবং এর কার্যকারিতা হাঁস পাই বলে দেহের শর্করা আমিষ ও চর্বি জাতীয় খাদ্যের যথাযথ বিকাশ হয় না। তাহলে আমরা জানলাম যে ডায়াবেটিস কি এখন আমরা ডায়াবেটিস কমানোর উপায় এবং ডাইবেটিস এর লক্ষণ নিয়ে আলোচনা করব।

ডায়াবেটিস এর লক্ষণ

যাদের শরীরে ডায়াবেটিস রয়েছে বা যাদের হয় নাই কিন্তু ডায়াবেটিস হবে হবে এমন মনে হয় বা কিছু লক্ষণ দেখা দেয় কিন্তু সঠিক পরামর্শর অভাবে বুঝতে পারেনা তাদের জন্য আজকের এই পোস্টটি তৈরি করা। আজকে আমরা ডায়াবেটিস এর কিছু সুনির্দিষ্ট লক্ষণ জানবো ডায়াবেটিস এর লক্ষণ গুলো হলঃ

১. ঘন ঘন ক্ষুধা লাগা

২. খুব বেশি পিপাসা লাগা

৩. যথেষ্ট খাওয়া সত্ত্বেও ওজন কমে যাওয়া

৪. ঘন ঘন প্রসাব হওয়া

৫. ক্লান্তি ও দুর্বল বোধ করা

৬. ত্বকের নানা সংক্রমণ

৭. চামড়া ফেটে যাওয়া

৮. দৃষ্টিশক্তি দুর্বল হওয়া

৯. ক্ষত শুকাতে বিলম্ব হওয়া

১০. খোসপাঁচড়া হওয়া ইত্যাদি

ডায়াবেটিসের প্রকারভেদ

ইতিপূর্বে আমরা ডায়াবেটিসের অজানা অনেক তথ্য জানতে পেরেছি। নিম্নোক্ত ডায়াবেটিসের আরো কিছু অজানা তথ্য আপনাদের মাঝে শেয়ার করব। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা বহুদিন যাবত বিভিন্ন গবেষণা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে ডায়াবেটিসের নানারকম কারণ খোঁজার চেষ্টা করে আসছেন। এবং গবেষণার ফল হিসাবে ডায়াবেটিসকে মূলত চারটি শ্রেণীতে ভাগ করেছে যথাঃ

১. ধরন ১ Type 1

২. ধরন ২ Type 2

৩. বিবিধ কারণভিত্তিক শ্রেণী

৪. গর্ভকালীন ডায়াবেটিস

ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা

ডায়াবেটিস হলে অবশ্যই আপনাকে খাদ্যের একটি নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে খেতে হবে তা না হলে ডায়াবেটিস ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকবে। এজন্য পরিমান মত নিয়ন্ত্রিত খাবার খেতে হবে। খাদ্যের নিয়ম মেনে চলার প্রধান উদ্দেশ্য হল ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা ও স্বাস্থ্য ও ত্বক ভালো রাখা। ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা হিসেবে কিছু নিয়ম মেনে খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। তাহলে ডায়াবেটিস কমানোর উপায় জানতে পারলাম।

ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকায় এমন হতে হবে যে সকল প্রকার পুষ্টি বিদ্যমান থাকে যেমনঃ

আটার রুটি ১ টি, ভাত ১২০ গ্রাম, মুড়ি বিশ গ্রাম, ডিম একটা, দুধ ১২০ মিলি, সবজি কাঁচা পাতা জাতীয় 100 গ্রাম, সিমের বিচি ৩০ গ্রাম, বাদাম ২৫ গ্রাম, কলা ১০০ গ্রাম ১ টি , আপেল ৪০ গ্রাম ১ টি, কমলা 60 গ্রাম ১ টি, তবে মনে রাখতে হবে দেহে শক্তির চাহিদা পূরণের জন্য শস্য ও শর্করা জাতীয় খাদ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটা মানুষের বয়স ও দেহের ওজন ভেদে শর্করার চাহিদা নির্ভর করে।

আরো পড়ুনঃ এইডস কি - এইডস রোগের লক্ষণ ও প্রতিরোধ সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

এছাড়াও ফুলকপি, বাঁধাকপি, মূলা, লাউ, গাজর, ওলকপি, ক্যাপসিকাম, কাঁচা টমেটো, পাকা পেঁপে, শসা খিরা, করলা, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, পটল, আখরোল, চালকুমড়া, লাউ, ডাটা, সজনা, ধুন্দল, ও কাঁচা মরিচ, পালং শাক, লাল শাক, পুঁইশাক, কলমি শাক, ডাটা শাক, কচু শাক ইত্যাদি। উপরোক্ত খাদ্য ইচ্ছে করলে বেশি খাওয়া যাবে তবে শরীরের ওজন এবং প্রয়োজন এর তুলনায় বেশি হলে এইসব খাদ্য সীমিত পরিমাণে খেতে হবে তাহলে স্বাস্থ্য ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

ফল হিসাবে কালোজাম, লেবু, আমড়া, জাম্বুরা, কামরাঙ্গা, বাঙ্গি, জামরুল, আমলকি, এছাড়া কচি ডাবের পানি খেতে পারবেন তবে স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য প্রতিদিনই কিছু টক জাতীয় ফল খেলে স্বাস্থ্য ভালো থাকে ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। এতক্ষণ আমরা অনেক কিছুই শিখে ফেললাম বা অবগত হলাম এবার আমরা ডায়াবেটিস কমানোর উপায় নিয়ে আলোচনা করব।

ডায়াবেটিস ঔষধের নাম

ডায়াবেটিস কে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য অনেকেই আছেন বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে থাকেন এবং ডাক্তারি পরামর্শ অনুযায়ী বিভিন্ন ঔষধ খেয়ে থাকেন। আজকে ডায়াবেটিস ঔষধ এর কিছু নাম সম্পর্কে আপনাদের জানাবো। সকল ডায়াবেটিস রোগীকেই খাদ্য ব্যবস্থা, নিয়মিত ব্যায়াম ও শৃঙ্খলা মেনে চলতে হয়। অনেকে এইসব বিষয়গুলো যথাযথ পালন করতে পারেনা। তবে এই সকল বিষয়গুলো যথাযথ পালন করলে অবশ্যই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আসবে।

ডায়াবেটিসের ঔষধ প্রধানত দুই প্রকার যথা- খাবার বড়ি, ইনসুলিন তবে ইনসুলিন আবার বিভিন্ন প্রকার হয়ে থাকে। ডায়াবেটিস চার ধরনের হয়ে থাকে আর এই সকল ধরনের উপর নির্ভর করে সেইসব ভিন্নভেদের ডায়াবেটিস রোগীদের ইনসুলিন ভিন্ন রকম হয়ে থাকে। কিছু ইনসুলিন রয়েছে যেগুলো ৩০/৭০, ৪০/১০০, ২৫/৫০, ৫০/৫০, ৪০/৬০ এমন ভিন্ন রকম হয়ে থাকে।

আরো পড়ুনঃ বাতের ব্যথার লক্ষণ - বাতের ব্যথা থেকে মুক্তির উপায়

সাম্প্রতিক বাজারে কিছু ইনসুলিন এসেছে। আর এইসব ইনসুলিন দ্রুত কার্যকারি। ইনসুলিন অবশ্যই ঠান্ডা জায়গায় রাখতে হবে। তা না হলে ইন্সুলেনের কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলবে। তবে অবশ্যই এই সকল ঔষধ কিংবা ইনসুলিন ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী করতে হবে। ইনসুলিন দেওয়ার কিছু নিয়ম রয়েছে এবং এই নিয়মে শরীরে ইনসুলিন পুশ করলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। যদিও ডায়াবেটিস চিরতরে শেষ হবে না কারণ ডায়াবেটিস একটি আজীবন রোগ।

ডায়াবেটিস কমানোর উপায়

ডায়াবেটিস সম্পূর্ণভাবে জীবন থেকে সরানো সম্ভব নয়। তবে ক্ষেত্রবিশেষে এরক সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব এবং স্বাস্থ্য ভালো রাখার সম্ভব যদি চিকিৎসকের পরামর্শ ও সুশৃংখল জীবন যাপন করা যায়। ডায়াবেটিস মূলত আজীবনের একটি রোগ। আর এই রোগ সঠিক ব্যবস্থা নিলে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের রাখা সম্ভব।

আর তাই এই রোগের সুচিকিৎসার জন্য ডায়াবেটিস সম্পর্কে রোগীর যেমন শিক্ষা প্রয়োজন তেমনি রোগীর নিকট আত্মীয়-স্বজনদেরও এই রোগ সম্পর্কে সমগ্র জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। কেননা ভালোভাবে শিক্ষা পেলে রোগী নিজেই নিজের রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখার দক্ষতা অর্জন করবে। এছাড়া জরুরি অবস্থা মোকাবেলা করার ক্ষমতা ও আয়ত্ত করতে পারবে। আর এই জন্য ডায়াবেটিস কমানোর উপায় হিসেবে অনেকগুলো পথ অবলম্বন করতে পারবেন যেমনঃ

১. নিয়মিত ও পরিমাণমতো সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে হবে

২. শরীরের প্রয়োজন মত ব্যায়াম এবং দৈহিক পরিশ্রম করতে হবে

৩. চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ গ্রহণ করতে হবে

৪. সর্বদা শরীর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা উচিত

৫. চিনি, মিষ্টি, গুড়, মধুযুক্ত খাবার থেকে দূরে থাকতে হবে

৬. শারীরিক কোন অসুবিধা দেখা দিলে দেরি না করে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে

৭. ডায়াবেটিস রোগের চিকিৎসা বন্ধ রাখা যাবে না

৮. তাৎক্ষণিক আর রক্তের শর্করা পরিমাপক যন্ত্র দিয়ে নিজে নিজেই রক্তের শর্করা পরিমাপ করে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে

৯. ৪০ মিনিট হাঁটতে হবে। তবে যাদের হাঁটাচলা করতে সমস্যা তাদের ক্ষেত্রে হাঁটাচলা থেকে এড়িয়ে চলতে পারেন

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

নিউ বাংলা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url