যক্ষা রোগের লক্ষণ - যক্ষা প্রতিরোধের উপায় জেনে নিন

যক্ষা একটি মারাত্মক সংক্রমণ রোগ যা জীবাণুর মাধ্যমে ছড়িয়ে থাকে। আমরা অনেকেই যক্ষা রোগের লক্ষণ কি সেটা জানিনা। এবং যক্ষা রোগের লক্ষণ সমূহ কোনগুলো সে সম্পর্কেও অবগত নই। আপনি যদি যক্ষা রোগের লক্ষণ সম্পর্কে জেনে না থাকেন তাহলে আজকের আর্টিকেল আপনাদের জন্য, কারণ আজকে যক্ষা রোগের লক্ষণ ও যক্ষা প্রতিরোধের উপায় জানব।

যক্ষা রোগের লক্ষণ - যক্ষা প্রতিরোধের উপায় জেনে নিন

সারা বিশ্বে মোট প্রতি ১০০ জনে ১০ জন যক্ষা রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। যক্ষা রোগের কফ, হাসি ও কাশির মাধ্যমে এই জীবাণু বাতাসে ছড়ায় এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে সুস্থ ব্যক্তির ফুসফুসে ঢুকে সেই ব্যক্তিকে রোগাক্রান্ত করে ফেলে। তাই যক্ষা রোগের লক্ষণ সমূহ জানতে হলে ধৈর্য সহকারে এই আর্টিকেলটি পড়তে থাকুন।

পোস্ট সূচীপত্রঃ যক্ষা রোগের লক্ষণ - যক্ষা প্রতিরোধের উপায় জেনে নিন

যক্ষা কি

যক্ষা বা টিভি নামক মারাত্মক রোগটির সাথে আমরা অনেকেই পরিচিত আবার অনেকেই জানিনা যক্ষা কি। যক্ষাকে সাধারণত ক্ষয় রোগ ও বলা হয়। একটি মারাত্মক সংক্রমণ জনিত রোগ। যক্ষা আক্রান্ত ব্যক্তির কফ, হাচি, কাশির মাধ্যমে যক্ষা রোগের জীবাণু বাতাসে মিশে এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে সুস্থ ব্যক্তিকে আক্রান্ত করে এর বিস্তার বৃদ্ধি করে। তাই এই যক্ষা রোগ থেকে সাবধানতা অবলম্বন করব। এখন আমরা জানবো যক্ষা রোগের লক্ষণ গুলো কি কি?

যক্ষা রোগের লক্ষণ

যক্ষা রোগ ফুসফুস ছাড়াও শরীরের বিভিন্ন স্থানে হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে লাসিকা গ্রন্থি, হাড় ও গিট, অন্ত্র, হৃদপিন্ডের আবরণ ও মস্তিষ্কের আবরণ ইত্যাদি। আগেকার সময়ে মানুষের শরীরে যক্ষা ধরা পড়লে হতাশ হয়ে জীবন যাপন পার করত। কারণ সেই সময়ে যক্ষা রোগের কোন ঔষধ ছিল না। যার কারণে যক্ষা হলে মানসিকভাবে ভেঙে পড়তো। কিন্তু বর্তমান সময়ে আগেকার সেই দিন নেই এখন উন্নত দেশ উন্নত চিকিৎসা। এখন যক্ষার সঠিক চিকিৎসা রয়েছে এবং নিয়মিত ঔষধ খাওয়ার ফলে যক্ষা নির্মূল করা সম্ভব

যক্ষা রোগের লক্ষণসমূহ গুলো হলঃ ফুসফুসের জন্য যক্ষার প্রধান লক্ষণ। কাশির সাথে সাধারণত যক্ষার যে লক্ষণ গুলো থাকে তা হল

১. বিকেলের দিকে শরীরে অল্প অল্প জ্বর আসা

২. রাতে শরীর ঘেমে যাওয়া

৩. খাবারের প্রতি মন্দা

৪. ওজন কমে যাওয়া

৫. কাশির সাথে কফ ও মাঝে মাঝে রক্ত বের হওয়া

৬. বুকে ব্যথা

৭. মেজাজ খিটখিটে হয়

আর এইসব লক্ষণ গুলো দেখা দিলে দেরি না করে অবশ্যই আপনার নিকটবর্তী রক্ষা পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়ে পরীক্ষা করুন অথবা চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। চিকিৎসকের পরামর্শ মত নিয়মিত পূর্ণমাত্রায় এবং নির্দিষ্ট সময়ব্যাপী যক্ষার ঔষধ খেলে এই রোগ সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যায়।

আরো পড়ুনঃ বাতের ব্যথার লক্ষণ - বাতের ব্যথা থেকে মুক্তির উপায়

তবে অবশ্যই একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে যে, যেহেতু যক্ষা হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ছড়িয়ে থাকে তাই যক্ষা হলে হাঁচি-কাশির সময় অবশ্যই নাকে মুখে মাক্স ব্যবহার করা অথবা রুমাল ব্যবহার করা। যেখানে সেখানে কফ বা থুত ফেলা থেকে বিরত থাকতে হবে। যক্ষা রোগের চিকিৎসা চলাকালীন সময়ে প্রথম দুই এক মাস অবশ্যই মাস্ক পরিধান করতে হবে। এতক্ষণে আমরা যক্ষা রোগের লক্ষণ সমূহ সম্পর্কে অবগত হয়েছি এখন আমরা যক্ষা প্রতিরোধের উপায় নিয়ে বিস্তারিত জানবো।

যক্ষা প্রতিরোধের উপায়

যক্ষা রোগীদের রোগের শুরুর অবস্থায় বিকেলে অথবা সন্ধ্যার দিকে জ্বর হয়। কিন্তু সকালের দিকে সে জ্বর থাকে না। যদি কোন ব্যক্তির কাশি দুই থেকে তিন সপ্তাহ বা তার বেশি সময় হয়ে থাকে তাহলে কালক্ষেপণ না করে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। নির্ণয় করা গেলেও চিকিৎসার মাধ্যমে খুব সহজেই যক্ষা রোগ ভালো করা সম্ভব।

যক্ষা কিংবা টিভি হলে এখনকার সময়ে আতঙ্ক বা চিন্তার কোন কারণ নেই। ডাক্তার এবং রোগীর সমন্বিত প্রতিষ্ঠার দ্বারা যক্ষার হাত থেকে রোগীকে সহজেই মুক্ত করা সম্ভব। অন্যান্য ব্যাধির চিকিৎসার চেয়ে যক্ষ্মার চিকিৎসা সাধারণত অধিক সময় হয়ে থাকে। ৬ মাস, ৯ মাস, ১২ মাস, অথবা ১৮ মাস পর্যন্ত এই চিকিৎসা চলমান থাকতে পারে। যক্ষা প্রতিরোধের উপায় সমূহ গুলো হল

১. শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর পর প্রত্যেকটি শিশুকে বিসিজি টিকা দিতে হবে

২. নিয়মিত ব্যায়াম করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে

৩. যক্ষা আক্রান্তদের ঘনিষ্ঠ সহচর্য এড়িয়ে চলতে হবে

৪. বসবাসের স্থান অবশ্যই খোলামেলা অথবা আলো বাতাস স্থানে করতে হবে

৫. যক্ষা আক্রান্ত ব্যক্তিকে সব সময় নাক মুখ ঢেকে চলাচল করতে হবে

৬. হাঁচি-কাশির সময় রুমাল অথবা তোয়ালে ব্যবহার করতে হবে

৭. রোগ সনাক্ত হলে অতিসত্বর চিকিৎসা শুরু করে দেওয়া এবং পণ্য মেয়াদের সঠিক মাত্রায় নিয়মিত ও ক্রমাগতভাবে ঔষধ সেবন করা

৮. রোগীর কফ, থুতু নির্দিষ্ট পাত্রে ফেলা ও পরে তা অন্যত্র পুতে ফেলতে হবে

৯. সূর্যের আলোতে যক্ষার জীবাণু অতি তাড়াতাড়ি ধ্বংস হয়ে যায় এবং অন্ধকার ও বদ্ধ ঘরে এ জীবাণু কয়েক ঘন্টা বেঁচে থাকতে পারে তাই যতটুকু সম্ভব আলো বাতাসে বেশি থাকা

১০. পুষ্টিকর ও সুষম খাবার খাওয়ার মাধ্যমে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে হবে

উপরোক্ত পদ্ধতি অনুশীলনের মাধ্যমে যক্ষা প্রতিরোধ করা সম্ভব। ইতিমধ্যে আমরা যক্ষা রোগের লক্ষণ সম্পর্কে অবগত হয়েছি এবং যক্ষা প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কেও জানতে পেরেছি এখন আমরা যক্ষা রোগের সঠিক চিকিৎসা সম্পর্কে জানব।

যক্ষা রোগের চিকিৎসা

আমাদের দেশে যক্ষা এখনো একটি বড় স্বাস্থ্য সমস্যার একটি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে প্রতিবছর বাংলাদেশ ৬ হাজারের বেশি মানুষ যক্ষা রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে। তবে সারা বিশ্বে এর সংখ্যা প্রায় ১৫ লক্ষের মত। এই রোগ শুধুমাত্র সুবিধা বঞ্চিত মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে না, এই রোগ যে কারো হতে পারে। তবে সচেতনতা এবং সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে এ রোগ সারিয়ে তোলা সম্ভব। তাই দেরি না করে আজকে আমরা যক্ষা রোগের চিকিৎসা সম্পর্কে জানব।

আরো পড়ুনঃ ডায়াবেটিস কমানোর উপায় - ডায়াবেটিস এর লক্ষণ - ডায়াবেটিস কি কারনে হয়

ভালো হওয়ার জন্য সাধারণত ৬ মাসের অধিক সময় চিকিৎসা নিতে হয়। প্রথম দুই মাসে চার রকম ঔষধ দিয়ে চিকিৎসা করানো হয়ে থাকে। এরপর পরবর্তী চার মাস দুই ধরনের ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা চালানো হয়। যক্ষা রোগের ঔষধ কিছুদিন খাওয়ার পর শতকরা 80 ভাগ লক্ষণ চলে যায়। আর এই সময়টাই রোগী ভুলবশত ভেবে নেয় যে তার শরীর থেকে যক্ষার চিরতরে দূর হয়ে গেছে এবং ঔষধ খাওয়া বন্ধ করে দেয়। আর এই জন্য এর ফলারফল মারাত্মক হতে পারে।

যক্ষা রোগের চিকিৎসায় প্রথম দুই মাসে যে চারটি ওষুধ দেওয়া হয় তা নিয়মিত খেতে হবে। একটা দিনও বাদ দেওয়া যাবে না এবং সঠিক পরিমাণে খেতে হবে। সাধারণত ভাবে রোগীর ওজন অনুযায়ী ঔষধের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। আর এই যেন সঠিক নিয়ম মেনে ঔষধ খেলে যক্ষা ভালো করা সম্ভব। তাছাড়া সঠিক চিকিৎসা না করলে এর ফল হিসাবে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

নিউ বাংলা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url