শিশুদের ডায়রিয়া হলে করণীয় কি - ডায়রিয়া প্রতিরোধের উপায় ২০২৩

সাধারণত কোন মানুষের যদি দিনে তিনবার বা তার চেয়ে অধিক পাতলা পায়খানাও হয়ে থাকে তাহলে তাকে ডায়রিয়া হিসেবে ধরা হয়। অনেকে আছেন যারা শিশুদের ডায়রিয়া হলে করণীয় কি সে সম্পর্কে অবগত নয়। আর যার কারণে শিশুদের নানারকম স্বাস্থ্য ঝুঁকি থেকে যায়। ডায়রিয়া হওয়ার ফলে শরীর থেকে পানি ও লবণ জাতীয় পদার্থ সহজেই বের হয়ে যায়। আজকে আপনাদেরকে জানাবো, শিশুদের ডায়রিয়া হলে করণীয় কি?

শিশুদের ডায়রিয়া হলে করণীয় কি - ডায়রিয়া প্রতিরোধের উপায় ২০২৩

ডায়রিয়া বাংলাদেশে সাধারণ একটি রোগ হলেও বন্যার সময় এ রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। তবে এ রোগ সহজেই নিরময় যোগ্য। আবার অনেক ক্ষেত্রে ডায়রিয়া হওয়ার পরে কেউ যদি অবহেলা এবং অসাবধানতা অবলম্বন করে তাহলে ডায়রিয়া মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারে। তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক শিশুদের ডায়রিয়া হলে করণীয় কি

পোস্ট সূচিপত্রঃ শিশুদের ডায়রিয়া হলে করণীয় কি - ডায়রিয়া প্রতিরোধের উপায় ২০২৩

ডায়রিয়া কেন হয়

আমাদের দেশে যে সকল কারণে সবচেয়ে বেশি ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা দেখা দেয় তার মধ্যে রয়েছে। খাবারে অনিয়ম, পেটে জীবাণুর আক্রমণ বা ইনফেকশন হওয়া। তবে এটি বেশিরভাগ সময় কয়েক দিনের মধ্যে সেরে ওঠে। এছাড়া ডায়রিয়া নরভাইরাস নামের ভাইরাসের আক্রমণের কারণেও হয়ে থাকে। ফুড পয়জনিং বা খাদ্য বিষক্রিয়ার মাধ্যমেও ডায়রিয়া রোগ ছড়িয়ে থাকে। পানিবাহিত রোগ ডায়রিয়ার জন্য মূলত দায়ী কিছু সংখ্যক ব্যাকটেরিয়া।

শিশুদের ডায়রিয়া হলে করণীয় কি

এখনকার সময়ে ডায়রিয়া সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে  শিশু ও নারীরা। সময় মত সঠিক চিকিৎসার নিতে না পারলে ডায়রিয়া হতে পারে মরণব্যাধি। কারণ ডায়রিয়া মৃত্যু পর্যন্ত ঘটিয়ে থাকে। আর এই জন্য শিশুদের ডায়রিয়া প্রতিরোধে বাড়তি সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে। কারণ শিশুদের শরীরে কোষের বাইরে পানি বা একটা সেলুলার ফ্লাইড বেশি থাকে। যার ফলে ডায়রিয়া হলে শিশুরা সহজেই শরীরে পানি শূন্যতা দেখা দেয়।

আরো পড়ুনঃ যক্ষা রোগের লক্ষণ - যক্ষা প্রতিরোধের উপায় জেনে নিন

আইসিডিডিআরবি ’র সূত্র মতে মাত্র 12 দিনে ১৩ হাজার ৪৮৩ জন ডায়রিয়া রোগের হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। আর এইসব ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে শিশু ও বয়স্ক মানুষের সংখ্যায় বেশি। শিশুর ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হলে অবশ্যই প্রতিবার পাতলা পায়খানার পর দুই বছরের কম বয়সী শিশুদের ৫০ থেকে ১০০ মিলি তরল পানীয় খাওয়াতে হবে। দুই থেকে দশ বছর বয়সী শিশুদের ১০০ থেকে ২০০ মিলি তরল পানীয় খাওয়াতে হবে।

বর্তমান সময়ে আমাদের বাংলাদেশে সাধারণত তিন থেকে ১২ বছরের শিশুরা ডায়রিয়া, ম্যালেরিয়া, জ্বর, আমাশয়, নিউমোনিয়া, টাইফয়েড ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত বেশি হচ্ছে। কারণ একদিকে জলবায়ু পরিবর্তন অন্যদিকে অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে বন্যা ও বর্ষণ। যার কারণে নিম্ন আয়ের পরিবারের লোকদের মধ্যে এই রোগ বেশি দেখা দিয়ে থাকে। তাদের অর্থনৈতিক অস্বচ্ছলোতার কারণে গরিব মা বাবা শিশুদের প্রতি সঠিক দায়িত্বশীল হতে পারেনা আর এই সময়ে নানাবিধ রোগ শরীরে বাসা বাঁধে।

শিশুদের ডায়রিয়া হলে করণীয় কি তা এখন জানব-শিশুর ডায়রিয়া দেখা দিলে শিশুকে বুকের দুধ বা বোতলের দুধ খাওয়ানো চালিয়ে যেতে হবে কোনক্রমে বন্ধ রাখা যাবে না। শিশু বমি করলে অল্প অল্প করে কিছুক্ষণ পরপর দুধ খাওয়াতে হবে। তরল পানীয়ের মধ্যে চিড়ার পানি, ভাতের মার, এবং ডাবের পানি খাওয়াতে হবে। শিশুকে প্রতি তিন চার ঘন্টা পর পর স্যালাইনের পানি খাওয়াতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে একেবারে প্রয়োজনের অধিক খাওয়ানো থেকে বিরত রাখতে হবে। বানানো খাবার স্যালাইন 6 ঘণ্টা পর্যন্ত রেখে খাওয়ানো যাবে এরপরে অবশিষ্ট স্যালাইন ফেলে দিতে হবে। প্রয়োজন পড়লে আবার নতুন করে খাবার স্যালাইন বানাতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে তরল খাবারের দিকে বেশি নজর দিতে হবে।

এছাড়া ছয় মাসের আগেই শিশুকে বাড়তি খাবার খাওয়ানোর চেষ্টা করতে হবে, এক বছরের আগে থেকে গরুর দুধ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে ছোট শিশুদের জন্য বাইরে থেকে কেনা খাবার, যেমন চিপস, জুস, মসলা জাতীয় খাবার, এই সমস্ত খাবার পরিহার করতে হবে কেননা এই সকল খাবার ডায়রিয়া রোগের প্রধান কারণ। আর তাই এইসব অভ্যাস দূর কলা গেলে শিশু অবশ্যই ডায়রিয়া মুক্ত থাকবে। একই সাথে শিশুকে সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে। শিশুকে খাওয়ানোর আগে অবশ্যই হাত বা সাবান দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে এবং শিশু একটু বড় হলে নিচে থেকে ধোঁয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশুকে অবশ্যই পানি ফুটিয়ে পান করাতে হবে। এছাড়া এখনকার সময়ে খাবার ফ্রিজে রাখা হয় যখন শিশুকে খাওয়ানো হবে তখন ফ্রিজ থেকে ভালো করে গরম করে খাওয়াতে হবে।

আরো পড়ুনঃ দ্রুত গলা ব্যাথা কমানোর উপায় - সর্দি ও গলা ব্যাথার ঔষধ

ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশুর ব্যাপারে সবসময় লক্ষ্য রাখতে হবে। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ক্যালোরি, আমিষ, ভিটামিন ও খনিজ উপাদান আছে কিনা সেই বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে এবং এইসব খাবারগুলো খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে। ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশু পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টি খাবার পেলে তাদের হজম শক্তির উন্নতি ঘটে। এছাড়া আরো একটি উপায় রয়েছে তা হল কাঁচা আনাজি কলা ছোলাসহ সিদ্ধ করে খোসা ছাড়িয়ে খাওয়ালে পাতলা পায়খানা দূর হয়ে যায়। তাহলে বন্ধুরা শিশুদের ডায়রিয়া হলে করণীয় কি এই সম্পর্কে আমরা জানতে পারলাম। এখন আমরা শিশুদের ডায়রিয়া হলে পানি শূন্যতার লক্ষণ জানবো।

শিশুদের ডায়রিয়া হলে পানি শূন্যতার লক্ষণ

আমরা সকলে অবগত আছি যে ডায়রিয়া হলে শরীর থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি ও লবণ বের হয়ে যায়। আর যখন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি ও লবণ বের হয়ে যায় তখন শরীরে পানি শূন্যতা দেখা দেয়। তবে ডায়রিয়া আক্রান্ত ব্যক্তির শূন্যতা দেখা দিলে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার না নিলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই আসুন ডায়রিয়া হলে পানি শূন্যতার লক্ষণসমূহ জেনে নিই। যদি কারো ডায়রিয়া হয় তাহলে পানি শূন্যতা দেখা দিলে এই লক্ষণ গুলো প্রকাশ পায়। আর তা হলোঃ

১. অতি সহজেই মুখ শুকিয়ে আসবে

২. ঘনঘন পিপাসা লাগবে

৩. চোখ শুকনো ও চোখের নিচে কালো রং ধারণ করবে

৪. মুখ ও ঠোট পানি শূন্যতার কারণে শুকিয়ে যাবে

৫. চেহারা গাঢ় হলুদ, ও তীব্র গন্ধযুক্ত প্রসাব বের হবে

৬. মাথা ঘুরবে

৭. শরীর ঝিমঝিম করবে

ডায়রিয়া হলে যা খাবেন

আমাদের দেশে ডায়রিয়া অতি সাধারণ একটি স্বাস্থ্য সমস্যা। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় দিনে তিনবারের বেশি পাতলা পায়খানা হওয়াকে ডায়রিয়া বলে। আর এই ডায়রিয়া আক্রান্ত ব্যক্তিদের যেসব খাবার খাওয়া উচিত তা হল

পানিঃ ডায়রিয়া আক্রান্ত ব্যক্তিকে অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে। কারণ ডায়রিয়া হলে শরীর থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি ও লবণ বের হয়ে যায়। যার কারণে শরীরে দুর্বলতা বমি এবং মাথা ঘোরার মত সমস্যা দেখা দেয়। এজন্য প্রয়োজন অত্যাধিক পানির পান করা।

টক দইঃ টক দই খাওয়ার মাধ্যমেও ডায়রিয়া রোধ করা সম্ভব কারণ, দইয়ের মধ্যে থাকা ভালো ব্যাকটেরিয়া ডায়রিয়া রোগ প্রতিরোধ করে। দই এর মধ্যে থাকা প্রবায়োটিকস যা শরীরকে ঠান্ডা রাখে।

কাঁচা কলাঃ ডায়রিয়া রোধ করার জন্য কাঁচা কলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। শরীর থেকে বেরিয়ে যাওয়া পানি এবং পুষ্টি ফিরিয়ে আনতে কলার ভূমিকা অপরিসীম। কলা খুব সহজে হজম হয়।

আরো পড়ুনঃ বাতের ব্যথার লক্ষণ - বাতের ব্যথা থেকে মুক্তির উপায়

ফলের রসঃ স্যালাইন যুক্ত পানির পাশাপাশি কমলা, ডাব, ডালিম কিংবা তরমুজের জুস খেতে হবে। তাহলে ডায়রিয়া আক্রান্ত ব্যক্তির মাথা ঘোরানো থেকে মুক্তি পাবে।

সিদ্ধ আলুঃ ডায়রিয়া আক্রান্ত ব্যক্তি সিদ্ধ আলু খাওয়ার মাধ্যমে ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণে বা সম্পূর্ণরূপে সারানো সম্ভব। তাই ডায়রিয়া আক্রান্ত ব্যক্তির অবশ্যই সিদ্ধ আলু খাওয়া প্রয়োজন।

ডায়রিয়া প্রতিরোধের উপায়

বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তন এবং অনাকাঙ্ক্ষিত বন্যা ডায়রিয়ার বেশি ছড়াচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে ডায়রিয়ার সংক্রমণ বেশি দেখা দিচ্ছে। আইসিডিডিআর’বি তথ্য অনুসারে ইতিহাসের সর্বোচ্চ ১২৭২ জন রোগীর ভর্তি হয়েছে। তবে এর সংখ্যা কিছুটা কম হলেও হাজারের নিচে নামেনি। আর তাই ডায়রিয়া থেকে বাঁচতে হলে অবশ্যই ডায়রিয়া প্রতিরোধের উপায় জানতে হবে। ইতিমধ্যেই আমরা শিশুদের ডায়রিয়া হলে করণীয় কি সে সকল বিষয়ে সম্পর্কে জানতে পেরেছি। এখন আমরা ডায়রিয়া প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে জানব।

১. মলত্যাগের পরে অবশ্যই হ্যান্ড ওয়াশ দিয়ে হাত জীবাণু মুক্ত করতে হবে

২. খাবার আগে অবশ্যই সাবান দিয়ে ভালো করে হাত ধুয়ে নিতে হবে

৩. খাবার তৈরি করা ও পরিবেশন করার আগে হাত ধুয়ে নিতে হবে ব্যবহারযোগ্য থালাবাসন চামচ বাটি ইত্যাদিও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।

৪. বাঁশি পঁচা খাবার বা মাছি বসা খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে

৫. রান্না করা খাবার বেশিক্ষণ বাইরে রেখে দিলে তা জীবাণু দ্রুত ছড়ায় এজন্য খাবার গরম গরম খেয়ে নেওয়ায় ভালো।

৬. শিশুদের ক্ষেত্রে ছয় মাস বয়স পর্যন্ত মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে

৭. খাদ্যদ্রব্য মশা, মাছি, পোকামাকড় ও ধুলাবালি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সর্বদা ঢেকে রাখতে হবে

৮. যেখানে সেখানে পায়খানা না তৈরি করে উঁচু স্থানে গর্ত করে সেখানে মলত্যাগ করতে হবে এবং বাচ্চাদের ক্ষেত্রে যেখানে সেখানে পায়খানা না করে একটি নির্দিষ্ট স্থানে করাতে হবে।

৯. ডায়রিয়া আক্রান্ত ব্যক্তিকে অন্যান্য খাবারের পাশাপাশি লবণযুক্ত স্যালাইন পানি খাওয়াতে হবে

১০. ডায়রিয়ার সময় অবশ্যই শিশুকে বুকের দুধ দিতে হবে এ সময় ভাতের মাড়, চিড়ার পানি, ডাবের পানি, লেবুর শরবত, খেতে হবে

১১. ডায়রিয়া আক্রান্ত ব্যক্তিকে খাবার স্যালাইন খাওয়াতে হবে, জিং ট্যাবলেট, প্যারাসিটামল, লোপেরামাইড জাতীয় ঔষধ খাওয়াতে হবে।

১৩. ডায়রিয়া হওয়ার ফলে কিছু কিছু খাবার আছে যা হজমে সমস্যা করে থাকে। সেগুলো পরিহার করতে হবে

১৪. ডায়রিয়া হলে ঝাল খাবার, ভাজাপোড়া, মিষ্টি জাতীয় খাবার, অতিমাত্রায় আঁশযুক্ত খাবার পরিহার করতে হবে

১৫. রাস্তাঘাটে যেসব লেবুর শরবত আখের রস বা ফল কেটে বিক্রি করে এইসব পানীয় খাবার থেকে এড়িয়ে চলতে হবে

১৬. বাইরের খাবার থেকে যতটুকু সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে

সর্বশেষ কথা

আজকে আমি সর্বশেষ কথা আজকে আমি ডায়রিয়ার সম্পর্কিত সকল তথ্য-উপাত্ত দিয়ে আপনাদেরকে জানাতে চেষ্টা করেছি। এই পোস্টটি পড়ে আপনারা যদি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন এবং আপনার নিকটবর্তী বন্ধুদের বেশি বেশি শেয়ার করবেন নতুন নতুন এমন পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

নিউ বাংলা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url