উচ্চ রক্তচাপ থেকে মুক্তির উপায় - কি কি কারণে উচ্চ রক্তচাপ হয়

উচ্চ রক্তচাপ ভয়ংকর পরিণতি ঘটায়। অনেকের ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপের কোন প্রাথমিক লক্ষণ প্রকাশ পাই না যার কারণে নিজের অজান্তেই নানা ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয়। আজকে উচ্চ রক্তচাপ থেকে মুক্তির উপায় নিয়ে আপনাদের সামনে উপস্থাপন করব। এই উচ্চ রক্তচাপ ক্রমাগতভাবে শরীরে বিভিন্ন অংশকে বিকলাঙ্গ করতে থাকে। তাই দেরি না করে ধৈর্য সহকারে উচ্চ রক্তচাপ থেকে মুক্তির উপায় এবং কি কি কারণে উচ্চ রক্তচাপ হয় সেইগুলো পড়তে থাকুন।

উচ্চ রক্তচাপ থেকে মুক্তির উপায় - কি কি কারণে উচ্চ রক্তচাপ হয়

অনেকেই রয়েছে যারা উচ্চ রক্তচাপ থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে নানা ধরনের ঔষধ খেয়ে থাকে। বর্তমান সময়ে ঘরোয়া উপায়ে উচ্চ রক্তচাপ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব তবে অবশ্যই আপনার ভেতরে এই বিষয়ে সম্পর্কে যথাযথ উপায় জানতে হবে। তাহলেই উচ্চ রক্তচাপ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন কি

প্রথমেই আমাদের জানতে হবে উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেশন কি? হাইপারটেশন ইংরেজি শব্দ যার বাংলা হল উচ্চ রক্তচাপ। বিভিন্ন বয়সের সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যেকটা মানুষের শরীরে রক্তচাপের মাত্রা ভিন্ন হয়ে থাকে। অনেক সময় অধিক উত্তেজনা, দুশ্চিন্তা, এবং অত্যাধিক পরিশ্রম এবং ব্যায়ামের ফলে উচ্চ রক্তচাপ বাড়তে পারে। তবে এই অধিক উচ্চ রক্তচাপ পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম এবং পরিমাণ মতো বিশ্রাম নিলে উচ্চ রক্তচাপ কমে যায়। সাধারণত বয়স ভেদে উচ্চ রক্তচাপের তারতম লক্ষ্য করা যায়।

এছাড়া যদি কারো রক্তচাপ স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেশি হয় এবং অধিক সময় বিশ্রাম নেওয়ার পরও বেশি হয় তাহলে এক্ষেত্রে ধরে নিতে হবে সেই ব্যক্তি উচ্চ রক্তচাপের রোগী। অত্যাধিক রক্তচাপ ভয়ংকার পরিণতি ডেকে আনতে সক্ষম। উচ্চ রক্তচাপের ফলে শরীরের কিডনি বিকল হয়ে যেতে পারে এবং মস্তিষ্কে স্ট্রোক হতে পারে। এবং এ থেকে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারে। এছাড়াও চোখের রেটিনাতে রক্তক্ষরণ হয়ে অন্ধত্ব বরণ করতেও পারে।

কি কি কারণে উচ্চ রক্তচাপ হয়

উচ্চ রক্তচাপ সাধারণত কোন সতর্কতা চিহ্ন বা উপসর্গ নেই, এবং অনেক মানুষ জানেন না তাদের এটি আছে। আপনার উচ্চ রক্তচাপ আছে কিনা তা জানার একমাত্র উপায় হল আপনার রক্তচাপ পরিমাপ করা। উচ্চ রক্তচাপ সাধারণত সময়ের সাথে বিকশিত হয়। এটি অস্বাস্থ্যকর জীবনধারা পছন্দের কারণে ঘটতে পারে, যেমন পর্যাপ্ত নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ না পাওয়া। ডায়াবেটিস এবং স্থূলত্বের মতো কিছু স্বাস্থ্যের অবস্থাও উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। গর্ভাবস্থায়ও উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে।

উচ্চ রক্তচাপ সাধারনত সময়ের সাথে বিকাশিত হতে থাকে। এটি অস্বাস্থ্যকর জীবনধারা পছন্দের কারণেও ঘটতে পারে। 90% রোগের ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপের কোন নির্দিষ্ট কারণ জানা যায় না। যার কারণে একে প্রাইমারি বা এসেন্সিয়াল রক্তচাপও বলা হয়ে থাকে। তবে কিছু কিছু বিষয় উচ্চ রক্তচাপের আশঙ্কা বাড়িয়ে থাকে যা নিম্নরূপ নিচে দেওয়া হলঃ

  • যদি বাবা-মায়ের উচ্চ রক্তচাপ থাকে তবে সন্তানদের ক্ষেত্রেও উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার আশঙ্কা থাকে
  • অতিরিক্ত ধূমপানের কারণেও উচ্চ রক্তচাপ সংঘটিত হয়
  • অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ
  • অত্যাধিক ওজন এবং অলস জীবনযাত্রা
  • অসাস্থ্যকর খাদ্যভাস
  • অতিরিক্ত অ্যালকোহল বা মদ পান করা
  • ডায়াবেটিস হলে

এছাড়াও কিছু কিছু অসুখের কারণেও উচ্চ রক্তচাপ হয়ে থাকে। আর তাই যদি নির্দিষ্ট কারণ খুঁজে পাওয়া যাই তাহলে একে বলা হয় সেকেন্ডারি হাইপারটেশন। আর এই সকল কারণগুলোর মধ্যে কয়েকটি কারণ হলো-

  • কিডনি রোগ
  • অ্যান্ড্রেনাল গ্রন্থি
  • পিটুইটারি গ্রন্থির টিউমার
  • ধমনীর বংশগত রোগ
  • গর্ভধারণ অবস্থায় একল্যাম্পসিয়া হলে
  • দীর্ঘদিন ধরে জন্মনিয়ন্ত্রণের বড়ি ব্যবহার করলে
  • এবং ব্যথানাশক কিছু কিছু ঔষধ খাওয়ার ফলেও হয়ে থাকে

উচ্চ রক্তচাপ নানাভাবে আপনার স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে। এটি আপনার হৃদয়, মস্তিষ্ক, কিডনি এবং চোখের মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলিকে গুরুতরভাবে আঘাত করতে পারে। উচ্চ রক্তচাপের কারণে মস্তিষ্কে রক্ত ও অক্সিজেন সরবরাহকারী ধমনী ফেটে যেতে পারে বা ব্লক হয়ে যেতে পারে, যার ফলে স্ট্রোক হতে পারে। মস্তিষ্কের কোষগুলি স্ট্রোকের সময় মারা যায় কারণ তারা পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায় না। স্ট্রোক বাক, নড়াচড়া এবং অন্যান্য মৌলিক ক্রিয়াকলাপে গুরুতর অক্ষমতা সৃষ্টি করতে পারে। একটি স্ট্রোক আপনাকে হত্যা করতে পারে। উচ্চ রক্তচাপকে সাধারণত নীরব ঘাতক বলা হয় কারণ এতে সাধারণত কোনো সতর্কতা চিহ্ন বা উপসর্গ থাকে না এবং অনেকেই জানেন না যে তাদের এটি আছে। আর তাই উচ্চ রক্তচাপ থেকে মুক্তির উপায় জানা খুবই জরুরী।

উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমাতে কি করা উচিত

উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমাতে কি করা উচিত এই সম্পর্কে অনেকেই চিন্তা করে থাকে কিন্তু সঠিক তথ্য না জানার কারণে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমাতে ব্যর্থ হয়। আপনারা ঘরোয়া ভাবে জীবনযাত্রার মান পরিবর্তন করে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমাতে পারবেন। শারীরিক কার্যকলাপ আপনাকে একটি স্বাস্থ্যকর ওজন রাখতে এবং আপনার রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে। আমেরিকানদের জন্য শারীরিক কার্যকলাপ নির্দেশিকা হল যে প্রাপ্তবয়স্করা প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে অন্তত 2 ঘন্টা এবং 30 মিনিটের  ব্যায়াম, যেমন দ্রুত হাঁটা বা সাইকেল চালানো, ইত্যাদি করতে হবে। এটি দিনে প্রায় 30 মিনিট, ও সপ্তাহে 5 দিন। শিশু এবং কিশোর-কিশোরীদের জন্য অবশ্যই প্রতিদিন 1 ঘন্টা শারীরিক পরিশ্রম করা উচিত।

উচ্চ রতচাপ থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে অবশ্যই আপনাকে খাওয়া-দাওয়া নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে ব্যায়াম করতে হবে। অনেকেই চাই অল্প সময়ে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে যার ফলে নানা ধরনের ঔষধ খেয়ে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে তবে ঔষধ খেয়ে ওজন কমানো অনেকটাই বিপদজনক। আর তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওজন কমানোর ঔষধ না খাওয়াই ভালো। উচ্চ রক্তচাপ কমাতে অবশ্যই খাদ্য তালিকার ওপর বাড়তি নজর দিতে হবে।

ধূমপান আপনার রক্তচাপ বাড়িয়ে থাকে, এবং আপনাকে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের উচ্চ ঝুঁকিতে রাখে। আপনি যদি ধূমপান না করে থাকেন তাহলে কখনোই ধূমপানের মত খারাপ অভ্যাস গড়ে তুলবেন না। আপনি যদি ধূমপান করেন, তাহলে অবশ্যই ধূমপান পরিহার করুন। আপনি কতটা অ্যালকোহল পান করবেন তা অবশ্যইসীমাবদ্ধ করুন। খুব বেশি অ্যালকোহল পান করা থেকে বিরত থাকুন, কারণ অ্যালকোহল যা আপনার রক্তচাপ বাড়াতে পারে। পুরুষদের প্রতিদিন 2টির বেশি অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় পান করা উচিত নয় এবং মহিলাদের প্রতিদিন 1টির বেশি অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় পান করা উচিত নয়।

উচ্চ রক্তচাপ ও খাদ্য তালিকা

উচ্চ রক্তচাপ এবং উচ্চ কোলেস্টেরলের মাত্রা হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের জন্য দুটি প্রধান ঝুঁকির কারণ ডায়েটে থাকা খাবার খনিজ পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ। ডায়েট শাকসবজি, ফল খেতে হবে। এতে চর্বি-মুক্ত বা কম চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত পণ্য, মাছ, মুরগি, মটরশুটি এবং বাদাম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। যে সকল রোগীদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে তাদের জন্য কম চর্বি ও কম কোলেস্টেরল যুক্ত খাবার গ্রহণ করতে হবে। যেমন-খাসি অথবা গরুর মাংস, গিলা, কলিজা, ডিম খুবই কম খেতে হবে। তবে বেশি বেশি আর্ক যুক্ত খাবার গ্রহণ করার সবচেয়ে ভালো।

উচ্চ রক্তচাপ থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে লবণ প্রয়োজনের অধিক পরিহার করতে হবে। তরকারিতে প্রয়োজনীয় লবণের বাইরে অতিরিক্ত লবণ খাওয়া যাবেনা। যদিও দৈনিক ৪ গ্রাম লবণ গ্রহণ করলে তা রক্তচাপ একেবারেই স্বাভাবিক থাকে। প্রতিদিন ৩০ থেকে ৫০ গ্রাম পর্যন্ত চর্বি গ্রহণ করা যেতে পারে। মাছের চর্বি চাইলে খাওয়া যাবে। মদ্যপান বা অ্যালকোহল পরিহার করতে হবে।

উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ

  • সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর পর্যাপ্ত পরিমাণে মাথা ব্যথা
  • চোখে দেখতে অসুবিধা হওয়া
  • অনেক সময় চোখে ঝাপসা দেখায়
  • ঘাড় ব্যথা করা
  • সবসময় খিটখিটে মেজাজ অনুভব করা
  • রাতে অনেক সময় ঘুমাতে না পারা

উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসা

উচ্চ রক্তচাপ সাধারণত চিকিৎসায় দুইভাবে করা হয়ে থাকে। তাদের মধ্যে একটি হলো ঔষধ ছাড়া এবং অন্যটি ওষুধের মাধ্যমে। যাদের হাইপারটেশনের মাত্রা খুব বেশি নয় বা অল্প কিছুদিন হচ্ছে এই সমস্যা দেখা দিয়েছে তাদের জন্য ঔষধ ছাড়া পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যেমন

  • জীবনধারার পরিবর্তন
  • দুশ্চিন্তা পরিহার করা
  • অতিরিক্ত ওজন কমানো
  • পরিমাণ মতো খাবার গ্রহণ করা
  • ধূমপান বা অ্যালকোহল অবশ্যই পরিত্যাগ করা
  • ক্যাফিন কমিয়ে দিন

আর এ সকল নিয়ম মেনে চললে কয়েক মাসের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ সহজেই মুক্তি পাওয়া সম্ভব। এজন্য আমাদের প্রতিনিয়ত খাদ্য তালিকায় বাড়তি নজর দিতে হবে। তাহলে আস্তে আস্তে তিন চার মাসের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।

উচ্চ রক্তচাপ থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে ঔষধের মাধ্যমেও সমাধান করা সম্ভব

এসিই ইনহিবিটরস - যেমন এনালাপ্রিল, লিসিনোপ্রিল, পেরিন্ডোপ্রিল এবং রামিপ্রিল

এনজিওটেনসিন-২ রিসেপ্টর ব্লকার (এআরবি) - যেমন ক্যান্ডেসার্টান, ইরবেসার্টান, লসার্টান, ভালসার্টান এবং ওলমেসার্টান

ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার - যেমন অ্যামলোডিপাইন, ফেলোডিপাইন এবং নিফেডিপাইন বা ডিল্টিয়াজেম এবং ভেরাপামিল

মূত্রবর্ধক - যেমন ইন্দাপামাইড এবং বেন্ড্রফ্লুমেথিয়াজাইড

বিটা ব্লকার - যেমন অ্যাটেনোলল এবং বিসোপ্রোলল

আলফা ব্লকার - যেমন ডক্সাজোসিন


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

নিউ বাংলা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url