ব্র্যাক ব্যাংক লোন পদ্ধতি - ব্যাংক লোনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ২০২৩

আজ আমরা ব্র্যাক ব্যাংক লোন সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো এবং কিভাবে গ্রাহকেরা কোনরকম প্রতারণা বা ভোগান্তির শিকার না হয়ে সহজেই ব্র্যাক ব্যাংক থেকে লোন নিতে পারবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
ব্র্যাক ব্যাংক লোন পদ্ধতি - ব্যাংক লোনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ২০২৩
আপনি যদি এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে অবশ্যই জানতে পারবেন ব্র্যাক ব্যাংক থেকে লোন নিতে হলে আপনাকে কী কী কাগজপত্র প্রদান করতে হবে।

ব্র্যাক ব্যাংক ( Brack Bank)

ব্র্যাক ব্যাংক হলো বাংলাদেশের বেসরকারী বাণিজ্যিক ব্যাংক গুলোর মধ্যে একটি। এটি মূলত বেসরকারী একটি প্রতিষ্ঠান এবং উন্নয়ন সংস্থা। ব্র্যাক ব্যাংক সংস্থাটি ব্র্যাক কর্তৃক পরিচালিত একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশের মধ্যে সেরা বেসরকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্র্যাক ব্যাংক ২০০৯ সালে “বাংলাদেশ বিজনেস এ ওয়ার্ড-২০০৯” পদক অর্জন করেন।এ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ফজলে হাসান আবেদ মূলত ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে সাহায্য সহযোগীতা করার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রাইভেট ব্যাংক হিসেবে ৪ জুলাই ২০০১ইং সালে ব্র্যাক ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন।

ব্যাংক লোন (Bank Loan): আমরা সবাই কমবেশি ব্যাংক লোনের (Bank Loan) সাথে পরিচিত। সহজভাবে বলতে গেলে সুদের বিনিময়ে ব্যাংক থেকে আমরা যে পরিমান ঋণ নিয়ে থাকি তাকেই ব্যাংক লোন বলে। লোন (Loan) ইংরেজী শব্দ এর বাংলা অর্থ হলোঃ ধার, কর্য কিংবা ঋণ করা। আর ব্যাংক লোন (Bank Loan) হলোঃ যখন ব্যাংক থেকে একটা নিদ্দিষ্ট পরিমান টাকা নিদ্দিষ্ট সময় ও শর্তাবলীর সাপেক্ষে সুদ সহ অর্থ্যাৎ আসলসহ অতিরিক্ত টাকা ব্যাংকে প্রদান করতে হয় তখন তাকে ব্যাংক লোন (Bank loan) বলে। নিম্নে ব্র্যাক ব্যাংক থেকে সহজেই কিভাবে লোন নিতে পারবেন তা আলোচনা করা হলো।

ব্র্যাক ব্যাংক লোনের প্রকারভেদ

ব্র্যাক ব্যাংক মূলত গ্রাহকদের ৩ (তিন) ধরনের লোন প্রদান করে থাকেন। যথাঃ
  • হোম লোন (Home Loan)
  • পার্সোনাল লোন (Personal Loan)
  • অটো লোন (Ato Loan)
হোম লোন (Home Loan)

আমরা জানি যে, হোম (Home) মানে বাড়ি আর লোন (Loan) মানে ধার, কর্য অথবা ঋণ। তাহলে সহজভাবে বলতে গেলে বাড়ি করার জন্য আমরা ব্যাংক থেকে সুদের বিনিময়ে ও নিদ্দিষ্ট সময় শর্তাবলী মেনে নিয়ে যে পরিমান অর্থ নিয়ে থাকি তাকে হোম লোন (Home Loan) বলে। ব্র্যাক ব্যাংক থেকে হোম লোন নিতে গেলে কিছু হোম লোনের শর্তাবলী ও বিষয়বস্তু রয়েছে। নিম্নে তা আলোনচনা করা হলো-

হোম লোনের ফিচার
  • ব্র্যাক ব্যাংক থেকে একজন গ্রাহক সর্বোচ্চ ২,০০,০০০০০ (দুই কোটি) টাকা পর্যন্ত হোম লোন নিতে পারবে।
  • লোন নেওয়ার পর ব্র্যাক ব্যাংককে ৯% হারে সুদ প্রদান করতে হবে।
  • গ্রাহককে লোন নেওয়ার পরবর্তা সময় থেকে সর্বোচ্চ ২০ বছররের মধ্যে লোন পরিশোধ করতে হবে।
  • গ্রাহককে যে পরিমান লোন প্রদান করা হবে সেই এমাউন্টের উপর ভিক্তি করে ২% হারে প্রসেসিং ফি প্রদান করতে হবে।
হোম লোন পাওয়ার যোগ্যতা
  • গ্রাহকের বয়স অবশ্যই ২৫ বছর থেকে শুরু করে ৬৫ বছরের মধ্যে হতে হবে।
  • ব্র্যাক ব্যাংক থেকে মূলত যেকোন বিজনেস ওনার, প্রাইভেট কোম্পানির মালিক, অথবা যেকোন পার্টনারশিপ কোম্পানির ম্যানেজার হোম লোন সহজেই নিতে পারবে।
  • গ্রাহক যে ধরনেরই ব্যবসা করুক না কেন, সেই ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ৩ বছরের প্রাক্টিসিং এক্সপেরিয়েন্স থাকতে হবে।
  • লোন গ্রহণকারীর প্রত্যেক মাসের ইনকাম সর্বনিম্ন ৩০,০০০/- (ত্রিশ হাজার) টাকা পর্যন্ত হতে হবে।
হোম লোনের প্রয়োজনীয় কাগপত্র
  • ঋণ আবেদনকারীকে সর্বশেষ এক বছরের ব্যাংক স্টেটমেন্ট জমা দিতে হবে।
  • ঋণ আবেদনকারীকে সর্বশেষ ট্যাক্স ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট জমা দিতে হবে।
  • ঋণ আবেদনকারীর ও জামিনদারের ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি এবং গ্রাহকের এক বছরের স্যালারি স্টেটমেন্ট।
  • অংশীদারি কোম্পানির জন্য যদি লোন করা হয় তাহলে অংশীদারি কোম্পানির দলিল প্রদান করতে হবে।
  • ইউটিলিটি বিলের কপি এবং ভাড়ার চুক্তি।
  • নিবন্ধনকৃত মালিকানার চুক্তিপত্র।
  • ঋণ আবেদনকারী যদি পেশাদারি হয়ে থাকে তাহলে পেশাদারি ডিগ্রি সনদ জমা ‍দিতে হবে।
ব্র্যাক ব্যাংক যেহেতু প্রাইভেট এবং বেসরকারী বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান তাই সময়ে সাথে সাথে হয়তো উপরে উল্লেখিত কাগজপত্র ছাড়াও আপনাকে আরো বিভিন্ন রকমের ডকুমেন্টস প্রদান করার কথা বলতে পারে। আর লোন পেতে গেলে আপনাকে অবশ্যই ব্যাংক যা যা ডকুমেন্টস চাই সেগুলো প্রদান করতে হবে।

পার্সোনাল লোন (Personal Loan)

সহজভাবে বলতে গেলে আমাদের ব্যক্তিগত প্রয়োজনের জন্য ব্যাংক থেকে সুদের বিনিময়ে যে পরিমান ঋণ নিয়ে থাকি তাকে পার্সোনাল লোন (Personal Loan) বলে। আমাদের চলার পথে এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হয় যখন ব্যাংক লোন ছাড়া সাহায্য করার মতো পাশে আর কাউকে পাওয়া যায়না। ব্যাংক লোন উঁচু-নিচু, ধনী-গরীব, মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত সবধরনে মানুষদেরই প্রয়োজন হয়। সিটি ব্যাংক থেকে পার্সোনাল লোন নিতে গেলে কিছু পার্সোনাল লোনের শর্তাবলী ও বিষয়বস্তু রয়েছে। নিম্নে তা আলোনচনা করা হলো-

পার্সোনাল লোনের ফিচার
  • ব্র্যাক ব্যাংক থেকে একজন গ্রাহক সর্বনিম্ন ১,০০,০০০/- (এক লক্ষ) টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২০,০০,০০০ (বিশ লক্ষ) টাকা পর্যন্ত হোম লোন নিতে পারবে।
  • লোন আবেদনকারীকে কোন রকম জামানত জমা দিতে হবেনা।
  • লোন আবেদনকারীকে অবশ্যই ১২-৬০ মাসের মধ্যে লোন পরিশোধ করতে হবে।
  • লোন আবেদনকারীর বয়স অবশ্যই ২৫-৬৫ বছর এর মর্ধ্যে হতে হবে।
  • গ্রাহককে যে পরিমান লোন প্রদান করা হবে সেই এমাউন্টের উপর ভিক্তি করে ২% হারে প্রসেসিং ফি প্রদান করতে হবে।
পার্সোনাল লোন পাওয়ার যোগ্যতা
  • লোন আবেদনকারীর মাসিক আয় বাংলাদেশী টাকায় সর্বনিম্ন ২৫,০০০/- (পঁচিশ হাজার) টাকা হতে হবে।
  • লোন আবেদনকারী যদি ব্যবসায়ী হয় তাহলে যে কোন ব্যবসা কমপক্ষে ৩ (তিন) বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
  • লোন আবেদনকারী যদি চাকুরীজীবি হয় তাহলে কমপক্ষে ১ (এক) বছরের অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ চাকুরীজীবী হতে হবে।
পার্সোনাল লোনের প্রয়োজনীয় কাগপত্র
  • ঋণ আবেদনকারী ও জামিনদারের জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি।
  • ঋণ আবেদনকারী ও জামিনদারের সদ্যতোলা পাসপোর্ট সাইজের ১ (এক) কপি রঙিন ছবি।
  • ঋণ আবেদনকারীর গত ৬ (ছয়) মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট।
  • এছাড়াও গ্রাহকের প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সর্বশেষ ৫ (পাঁচ) বছরের ট্রেড লাইসেন্স জমা দিতে হবে।
  • আবেদনকারীকে অংশীদারি ব্যবসার ক্ষেত্রে নিবন্ধিতদের চুক্তিপত্র দেখাতে হবে।
কার লোন (Car Loan)

প্রত্যেকটি মানুষের জীবনে এই একটা সখ থাকেই । যে আমার যদি একটা গাড়ি হতো। কিন্তু টাকার বা অর্থের অভাবে আমাদের মধ্যে অনেক মানুষই এই সখ পূরণ করতে পারেনা। আর বর্তমানে প্রত্যেকটি দেশ যেমন পিছিয়ে নেই ঠিক তেমনি বাংলাদেশও আর পিছিয়ে নেই। বাংলাদেশে এখন এ রকম অনেক ব্যাংক আছে যারা অর্থের অভাবে নিজের সখ পূরণ বা গাড়ি কিনতে পারছেনা তাদের এই ইচ্ছা পূরণ করার জন্য গ্রাহকদের স্বল্প সুদে কার লোন দিচ্ছেন ব্র্যাক ব্যাংক। একদম সহজভাবে বলতে গেলে মূলত গাড়ি কেনার উদ্দেশ্যে সুদের বিনিময়ে ও বিভিন্ন শর্তাবলীর উপর ভিক্তি করে ব্যাংক থেকে আমরা যে পরিমান লোন বা ঋণ নিয়ে থাকি তাকে কার লোন (Car Loan) বলে।

কার লোনের ফিচার
  • ব্র্যাক ব্যাংক থেকে একজন গ্রাহক সর্বোচ্চ ৪০,০০,০০০ (চার লক্ষ) টাকা পর্যন্ত হোম লোন নিতে পারবে।
  • গ্রাহক যদি বেশি দামের গাড়ি ক্রয় করতে চায় তাহলে গাড়ির দামের ৫০% বা সমপরিমান মুল্য এই ব্যাংক থেকে নিতে পারবে।
  • লোন আবেদনকারীকে অবশ্যই ১২-৬০ মাসের মধ্যে লোন পরিশোধ করতে হবে।
  • কার লোন (Car Loan) শুধুমাত্র সেবামূলক নতুন গাড়ি এবং রিকন্ডিশন গাড়ির জন্য প্রযোজ্য।
  • গ্রাহককে যে পরিমান লোন প্রদান করা হবে সেই এমাউন্টের উপর ভিক্তি করে ২% হারে প্রসেসিং ফি প্রদান করতে হবে।
কার লোন পাওয়ার যোগ্যতা
  • লোন আবেদনকারীর মাসিক আয় বাংলাদেশী টাকায় সর্বনিম্ন ২৫,০০০/- (পঁচিশ হাজার) টাকা হতে হবে যারা বেতনভোগী কর্মচারী।
  • বেতনভোগী কর্মচারী ছাড়া অন্য গ্রাহক যদি এই লোন নিতে চায় তাহলে তার মাসিক আয় সর্বনিম্ন ৩০,০০০/- (ত্রিশ হাজার) টাকা হতে হবে।
  • লোন আবেদনকারী যদি চাকুরীজীবি হয় তাহলে কমপক্ষে ১ (এক) বছরের অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ চাকুরীজীবী হতে হবে।
  • লোন আবেদনকারী যদি ব্যবসায়ী হয় তাহলে যে কোন ব্যবসা কমপক্ষে ৩ (তিন) বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
কার লোনের প্রয়োজনীয় কাগপত্র
  • ঋণ আবেদনকারীর জাতীয় পরিচপত্র অথবা পাসপোর্টের ফটোকপি।
  • ঋণ আবেদনকারীর ১ (এক) কপি পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি।
  • গ্রাহক যে ধরনের গাড়ি ক্রয় করতে চাই সেই গাড়ির ডিটেল্স তথ্য ব্যাংকে প্রদান করতে হবে।
  • শেষ এক বছরের ব্যাংক হিসাব বিবরণ ব্যাংকে জমা দিতে হবে।
  • আবেদনকারীর যদি বিজনেস কার্ড বা ভিজিটিং কার্ড থাকে তাহলে তার ফটোকপি জমা দিতে হবে।
  • বেতনভোগী কর্মচারী হলে প্রদত্ত পরিচয়পত্র জমা দিতে হবে।
  • গ্রাহক যদি ব্যবসায়ী হয় তাহলে ট্রেড লাইসেন্স এর ফটোকপি জমা দিতে হবে।
  • ব্যবসায়ীদের জন্য গত এক বছরের ব্যাংক হিসাব বিবরণী প্রদান করতে হবে।
  • অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানের প্রদত্ত পেশাগত সনদ ব্যাংকে জমা দিতে হবে।
পাঠকের উদ্দেশ্যে বলছি, যদি একজন পাঠক উপরিউল্লেখিত তথ্য গুলো মনোযোগ সহকারে পড়ে তাহলে আশা করছি তার ব্র্যাক ব্যাংক থেকে লোন নিতে গেলে কি কি ডকুমেন্টস বা তথ্য প্রয়োজন হবে তার একাট পরিষ্কার ধারনা পাবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

নিউ বাংলা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url