ঈদে মিলাদুন্নবী কি - ঈদে মিলাদুন্নবীর ইতিহাস সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন ২০২৩

প্রিয় পাঠক আজকে আমি এমন এক বিষয় সম্পর্কে আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করতে যাচ্ছি সেটি হল ঈদে মিলাদুন্নবী কি? আপনারা কি জানেন ঈদে মিলাদুন্নবী কি এবং কেন ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা হয়। আজকে এই পোস্ট জুড়ে ঈদে মিলাদুন্নবী কি এবং ঈদে মিলাদুন্নবীর ইতিহাস সম্পর্কে অনেকেই রয়েছে যারা ঈদে মিলাদুন্নবী সম্পর্কে জানেনা।

ঈদে মিলাদুন্নবী কি - ঈদে মিলাদুন্নবীর ইতিহাস সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন ২০২৩

ঈদে মিলাদুন্নবী বলতে নবীর জীবন বৃত্তান্ত ও তার মুজিজা সমূহ ও সিরাতের আলোচনার জন্য একত্রিত হওয়া। এবং একই সাথে যথাযথ প্রশংসা সহ তার প্রতি দুরুদ ও সালাম পাঠ করা। জীবিত ও মিতের জন্য দোয়া তাবারুক বা খাবার আয়োজন করে মানুষের অন্তরের নবীর জন্মে আনন্দিত হওয়া।

ঈদে মিলাদুন্নবী কি

মিলাদুন্নবী বলতে বোঝানো হয় যার অর্থ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্মের সময় বা জন্ম কালীন ঘটনা। ঈদে মিলাদুন্নবী হল তার জীবনকালের ঘটনা বলি সানা সিফাত মাতৃগর্ভে অবস্থানকালীন অলৌকিক ঘটনা বলি ও তার বংশ পরিচয় হালিমা রা. এর ঘরে প্রতিপালিত হওয়ার ঘটনা সমূহ হল মিলাদুন্নবী।

একাদা এক সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর জন্ম সাল সম্পর্কে হযরত কায়স ইবনে মাখরামা রা. বলেন- অর্থাৎ আমিও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম দুজনেই হাতীর বছরে জন্মগ্রহণ করেছি। হযরত ওসমান বিন আফফান রা. কুবাশ বিন আসিয়ামকে প্রশ্ন করেন আপনি বড় না রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বড়? তিনি উত্তরে বলেন- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম আমার থেকে বড়, আর আমি তার পূর্বে জন্মগ্রহণ করেছি।

ঈদ শব্দের আভিধানিক অর্থ হল খুশী হওয়া, বারবার ফিরে আসা, আনন্দ উৎযাপন পালন করা ইত্যাদি। মিলাদুন্নবী’ বলতে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগমনকে বুঝায়। আর ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগমনের খুশী উৎযাপন করাকে বুঝায়। সহজ ভাষায় বলতে গেলে মিলাদুন্নবী অর্থ নবী (সাঃ) এর জন্ম বা আগমন।

ঈদে মিলাদুন্নবীর ইতিহাস

পবিত্র মিলাদুন্নবীর ইতিহাস বেশ প্রাচীন। মিলাদুন্নবীর সূচনা করেছিলেন স্বয়ং মহান আল্লাহ তায়ালা। নবীগণের মহাসম্মেলন ডেকে মিলাদুন্নবী আয়োজক স্বয়ং আল্লাহ তা'আলা করেছিলেন। আর তিনি ছিলেন সেইখানকার সভাপতি সকল নবীগণ ছিলেন শ্রোতা। আর ওই মজলিসের উদ্দেশ্য ছিল হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বেলাদাত, শান ও মান অন্যান্য নবীগণের সামনে তুলে ধরা এবং তাদের থেকে তার ওপর ঈমান অনায়ন ও সাহায্য সমর্থনের প্রতিশ্রুতি আদায় করা। পবিত্র কোরআন মাজীদের তৃতীয় পারা সূরা আলে ইমরানের ৮১-৮২ নং আয়াতের মধ্যে মহান আল্লাহতালা ওই মিলাদুন্নবী মাহফিলের কথা উল্লেখ করেছেন। নবীজির সম্মানে এটাই ছিল প্রথম মিলাদ মাহফিল এবং মিলাদ মাহফিলের উদ্যোক্তা ছিলেন স্বয়ং মহান আল্লাহ তায়ালা।

তাহলে আমরা একটু একটু করে ঈদে মিলাদুন্নবী কি এবং ঈদে মিলাদুন্নবীর ইতিহাস তার বিস্তারিত জানতে পারছি। তাই সম্পূর্ণ জানতে হলে অবশ্যই পোস্টটি ধৈর্য সহকারে শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন। উপরোক্ত সর্বপ্রথম মিলাদ পাঠকারী ছিলেন স্বয়ং মহান আল্লাহতালা এবং কিম কারীগর ছিলেন আম্বিয়ায়ে কেরাম। আর এই মিলাদ ও কিয়াম কোরআনের ইকতেদো উননস দ্বারা প্রমাণিত যে কোরআনে নস চার প্রকার যথাঃ ইবারত, দালালত, ইশারাও, ইক্কতিজা।

সুতরাং মিলাদুন্নবী মাহফিল নবীগণের সম্মিলিত সুন্নাত ও ইজমায়ে আম্বিয়া দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। কোরআন মাজিদে আলে ইমরানের আয়াত ৮১-৮২ দ্বারা উল্লেখ্য যে আল্লাহতালা বলেন- হে প্রিয় রাসূল আপনি স্মরণ করুন ওই দিনের কথা যখন আল্লাহতালা সমস্ত নবীগণ থেকে প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলেন এই কথার ওপর যে যখন আমি তোমাদেরকে কিতাব ও হিকমত দিয়ে দুনিয়ায় প্রেরণ করব তারপর তোমাদের কাছে আমার মহান রাসূল সাঃ যাবেন এবং তোমাদের নবুওয়াত ও কিতাবের সত্যতার স্বাক্ষর প্রদান করবে, তখন তোমরা অবশ্যই তার ওপর ঈমান আনবে ও অবশ্যই তাকে সাহায্য করবে।

মহান আল্লাহ তা'আলা আরো বলেন-তোমরা পরস্পর সাক্ষী থাকো আর আমি তোমাদের সাথে মহা সাক্ষী রইলাম অতঃপর যে কোন লোক এই অঙ্গীকার থেকে ফিরে যাবে সে নফরমান কাফের হবে।

হযরত আদম আলাইহিস সালাম এর যুগে মিলাদ

প্রত্যেক নবী নিজ নিজ যুগে আমাদের প্রিয় নবী ও আল্লাহর প্রিয় হাবিবের আবির্ভাবের সুসংবাদ দিয়ে গেছেন। হযরত আদম আলাইহি সাল্লাম তার প্রিয় পুত্র ও প্রতিনিধি হযরত শীষ কে প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর তাজিম করার জন্য বলে গেছে। হযরত আদম আলাইহিস সালাম এর উক্তিটি এমন ছিল যে, হে আমার প্রিয় বৎস আমার পরে তুমি আমার খলিফা। সুতরাং এই খেলাফতকে তাকওয়ার তাজ ও দৃঢ় একিনের দ্বারা মজবুত করে ধরে রেখো। আর যখনই আল্লাহর নামে জিকির করবে তার সাথে প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর নামটাও উল্লেখ করবে। তার কারণ হলো এই যে আমি রুহ ও মাটির মধ্যবর্তী অবস্থায় থাকার সময় পবিত্র ওই নামটি আরশের আজিম যথা আল্লাহর নামের সাথে লিখিত দেখেছি।

আকাশের এমন কোন স্থান ছিল না যেখানে প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এর নাম অঙ্কিত পায়নি। আমার রব আমাকে বেহেস্তে বসবাস করতে দিলেন বেহেশতের এমন কোন প্রসাদ ও কামরা পাই নাই যেখানে মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নাম ছিল না। সুতরাং হে শিস তুমি এই নাম বেশি বেশি পাঠ করবে কেননা ফেরেশতাগণ পূর্ব হতে এর নাম জপতে মশগুল রয়েছে।

হযরত ইব্রাহিম আ. এর মিলাদ পাঠ ও কেয়াম

হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম ও হযরত ইসমাইল আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আল্লাহর কাবা ঘর তৈরি করেছিলেন তখন ইব্রাহিম আলাই সালাম উক্ত ঘরের নির্মাণ কাজ কবুল করার জন্য নিজের ভবিষ্যৎ সন্তানাদিদের মুসলমান হয়ে থাকার জন্য আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করার পর দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বা কিয়াম করে নবী (দঃ) এর আবির্ভাব আরবেও হযরত ইসমাইলের বংশে জন্ম হওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে এইভাবে ফরিয়াদ করেছিলেন-

হে আমার রব! তুমি এই আরব ভূমিতে আর ইসমাইলের বংশের মধ্যে এবং তাদের মধ্য হতে সেই মহান রাসূলকে প্রেরণ করো যিনি তোমার আয়াতসমূহ তাদের কাছে পাঠ করে শোনাবে তাদেরকে কুরআন সুন্নাহর বিশুদ্ধ জ্ঞান শিক্ষা দেবে। এবং বাহিক্য ও আত্মিক পবিত্রতা থেকে তাদের পবিত্র করবে। এই কথায় এইখানে দেখা যায় যে হযরত ইব্রাহিম আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ৪০০০ বছর পূর্বেই মুনাজাত আকারে তার আবির্ভাব ঘটে তার সারা জিন্দেগীর কর্মচঞ্চল্য ও মানুষের আত্মার পরিশুদ্ধতার ক্ষমতা বর্ণনা করে এর মিলাদের সারাংশ পাঠ করেছেন এবং এই মোনাজাত বা মিলাদ দণ্ডায়মান অবস্থাই করেছে যা পূর্বের দুটি আয়াতের মধ্যে পাওয়া যায়।

হযরত ইব্রাহিম আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর নিকট থেকে চেয়ে আমাদের প্রিয় নবীকে আরবের ইসমাইল আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বংশে নিয়ে এসেছেন। বর্তমান মিলাদ শরীফে রাসূলে পাকের আবির্ভাবের যে বর্ণনা দেওয়া হয় তা হযরত ইব্রাহিম আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দোয়ার তুলনায় সামান্যতম অংশ মাত্র সুতরাং আমাদের মিলাদ শরীফ পাঠ ও হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালামের সুন্নত।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

নিউ বাংলা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url