বিভিন্ন ফলের উপকারিতা ও পুষ্টি - কোন ফলে কি ভিটামিন

আমরা প্রতিনিয়ত কতই না খাবার খাচ্ছি। কিন্তু একটাবার ভেবে দেখুন এগুলো খেয়ে কি শুধুমাত্র আমাদের প্রয়োজনটুকু মেটাতে পারছি কিনা বা কতটা পরিমাণ খেলে স্বাস্থ্যের জন্য ভালো তা আমরা অনেকেই জানিনা আজকে আমরা বিভিন্ন ফলের উপকারিতা ও পুষ্টি সম্পর্কে জানব-আমরা অনেকেই জানিনা যে বেশিরভাগ ফলের মধ্যে ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অন্যান্য উপকারী উপাদান থাকে।

বিভিন্ন ফলের উপকারিতা ও পুষ্টি - কোন ফলে কি ভিটামিন

বিভিন্ন ফলের উপকারিতা ও পুষ্টি সম্পর্কে জানতে হলে অবশ্যই আমাদের বিভিন্ন ফল সম্পর্কে জানতে হবে। ফল আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী একটি খাদ্য বা উপাদান। প্রতিটি মানুষের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় যেকোনো ধরনের ফল থাকা প্রয়োজন আর এই ফল যেমন স্বাস্থ্যের জন্য ভালো তেমনি ত্বকের জন্য ও বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বেশ কার্যকরী। তাহলে আর দেরি না করে চলুন বিভিন্ন ফলের উপকারিতা ও পুষ্টি কোন সম্পর্কে জানি।

পোস্ট সূচিপত্রঃ বিভিন্ন ফলের উপকারিতা ও পুষ্টি - কোন ফলে কি ভিটামিন

কমলার উপকারিতা

১. খুবই জনপ্রিয় এবং সহজলভ্য ফল হল কমলা লেবু। আর এই কমলালেব সারা বছর পাওয়া যায়। বর্তমান সময়ে এটি বাংলাদেশ ব্যাপক হারে উৎপাদন করা হচ্ছে।

২. যাদের শরীরে ঠাণ্ডা লাগে, জ্বর হয়, কানের সমস্যা দূর করতে অতি উপযোগী ফল হল কমলালেবু। কমলায় রয়েছে বিটা ক্যারোটিন যা সেল ড্যামেজ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।

৩. লিমোনয়েড নামে এক পদার্থ রয়েছে কমলালেবুতে যা মুখ, ত্বক, ফুসফুস, স্তন, পাকস্থলীতে ক্যানসার প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।

৪. কমলালেবুতে থাকা ভিটামিন বি৬ দেহে হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সহায়ক। কমলালেবুতে ভিটামিন বি ফোলেটের জন্য খুবই ভালো একটি উৎসব যা জন্মগত ত্রুটি এবং হৃদরোগের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

৫. কমলালেবুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, আর এটি ক্যান্সার প্রতিরোধ করে, শরীর স্বাস্থ্যকর করে তোলে, রক্ত তৈরি করতে সক্ষম, ও শরীরে ক্ষত পূরণ করতে খুবই উপযোগী ফল।

আরো পড়ুনঃ কাঁচা পেঁপে খাওয়ার নিয়ম - পাকা পেঁপে খাওয়ার উপকারিতা ২০২৩

৬. 100 গ্রাম কমলালেবুতে রয়েছে ভিটামিন বি ০.৮ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ৪৯ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ৩০০ মিলিগ্রাম, এবং ফসফরাস ২৩ মিলিগ্রাম।

৭. মানুষের শরীরে যতটুকু ভিটামিন সি এর প্রয়োজন হয় তার সবটাই পূরণ করতে কমলালেবু যথেষ্ট

৮. ডায়াবেটিস প্রতিরোধ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় ওজন কমাতেও বেশ সাহায্য করে কমলালেবু।

পেঁপের উপকারিতা

বাংলাদেশের এমন কোন জায়গা নেই যেখানে পেঁপে পাওয়া যাবে না। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ছড়িয়ে রয়েছে পেঁপের চাষ। পেঁপে খুবই উপকারী একটি সবজি বা ফল যা আমাদের শরীরের জন্য ভালো আমরা জানি কাঁচা অবস্থায় পেপে সবজি হিসেবে এবং পাকা অবস্থায় ফল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। আজকে আমরা পেঁপের উপকারিতা সম্পর্কে জানব-

পাকা পেঁপে মুখেরকালো দাগ দূর করার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ফল। পাকা এক টুকরো পেঁপে নিয়ে আক্রান্ত স্থানে ভালো করে লাগিয়ে দিন। আধা ঘণ্টা বা এক ঘন্টা রাখুন, তারপর পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। সপ্তাহে ৩/৪ বার এভাবে লাগাতে থাকুন। পেঁপেতে থাকা প্যাপিন মরা কোষ দূর করে ত্বকের রঙ উজ্জ্বল করে তোলে।

পাকা পেপেতে ক্যারোটিন ও ভিটামিন সি সমৃদ্ধ রয়েছে। পেঁপেতে প্রচুর পরিমাণে এনজাইম আছে যা খাবার হজমে সহায়তা করে থাকে। এছাড়াও প্রচুর পানি ও দ্রবণীয় ফাইবার আছে। হজমের সমস্যায় যে সকল মানুষ ভুগে থাকেন তারা যদি নিয়মিত পাকা বা কাঁচা পেঁপে স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।

আরো পড়ুনঃ কিসমিসের উপকারিতা - কিসমিস খাওয়ার নিয়ম ২০২৩

মানুষের শরীরে রক্ত আমাশয় অনেক বড় সমস্যা। আপনারা যদি প্রত্যেক সকালে কাঁচা পেঁপের আঠা ৫/৭ ফোঁটা ৫/৬ টি বাতাসার সঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারেন তাহলে ভালো ফল পাওয়া যাবে ২/৩ দিন খাওয়ার পর রক্তপড়া কমতে থাকবে।

যে কোনো প্রকারের কৃমি হলে, পেঁপের আঠা ১৫ ফোঁটা ও মধু ১চা চামচ একসঙ্গে মিশিয়ে খেতে হবে। এরপর আধা ঘন্টা বা একঘন্টা পরে হালকা গরম পানি আধা  কাপ খেয়ে তারপরে ১ চামচ বাখারি (শসা-ক্ষীরার মতো এর স্বাদ) চুনের পানি খেতে হবে। আর এভাবে ২ দিন খেলে কৃমির উপদ্রব কমে যাবে। কৃমি বিনাশের ক্ষেত্রে পেঁপে এটি মহা ঔষধ বটে।

চিনির পরিমাণ কম থাকায় ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য পেঁপে একটি আর্দশ ফল। যাদের ডায়াবেটিস নেই তাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পেঁপে রাখা উচিত। পেঁপে ডায়াবেটিস হওয়া প্রতিরোধ করে।

নিয়মিত কাঁচা পেঁপের তরকারি সদ্য বাচ্চা সন্তান জন্ম দেওয়া নারীর স্তনের দুধ বাড়ায়। প্রতিদিন দুপুরে ভাত খাওয়ার পর এবং রাতে ভাত খাওয়া বা রুটি খাওয়ার পর এক টুকরা কাঁচা পেঁপে ভালো করে চিবিয়ে গ্লাস পানি পান করলে সকালে পেট পরিষ্কার থাকে।

কাঁচা পেঁপে বা পেঁপে গাছের আঠা পেটের অসুখ কষ্ট কাঠিন্য প্রভৃতি রোগের জন্য বেশ উপকারী। আমাশয় শরীর থেকে মুক্তি পাওয়ার মহঃ অদ্ভুত ঔষধ হল কাঁচা পেঁপের আঠা।

বেলের উপকারিতা

আমরা জানি বেলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও পটাশিয়াম। প্রতি ১০০ গ্রাম বেলে খাদ্যশক্তি আছে ৮৭ কিলোক্যালরি, জলীয় অংশ ৭৭ দশমিক ৫ গ্রাম, শর্করা ১৮ দশমিক ৮ গ্রাম, আমিষ ২ দশমিক ছয় গ্রাম, চর্বি শূন্য দশমিক ২ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৩৮ মিলিগ্রাম, লোহা শূন্য দশমিক ৬ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি-১ শূন্য দশমিক শূন্য ৩ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি-২ শূন্য দশমিক শূন্য ২ মিলিগ্রাম ও ভিটামিন সি ৯ মিলিগ্রাম।

কচি বেল টুকরা করে কেটে যদি রোদে শুকিয়ে নেওয়া হয় তাহলে তাকে বেল শুট বলে। আর যাদের শরীরে আলসার আছে, তারা যদি এই বেল শুটের সঙ্গে পরিমাণমতো বার্লি মিশিয়ে রান্না করে নিয়মিত খাই তাহলে আলসার দ্রুত সেরে যায়।

গরমের সময় পরিশ্রমের পর বেলের শরবত খেলে ক্লান্তি ভাব দূর হয়। বেলের ভিটামিন ‘এ’ চোখের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলোর পুষ্টি জোগায়। এর ফলে চোখের বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

বেল পেটের নানা অসুখ সারাতে অত্যন্ত কার্যকর। দীর্ঘমেয়াদি আমাশয় ও ডায়রিয়া রোগে কাঁচা বেল নিয়মিত খেলে দ্রুত আরোগ্য লাভ করা সম্ভব। বেলের শাঁস পিচ্ছিল বলে এই ফল পাকস্থলীর জন্য উপকারী। খাবারও সঠিকভাবে হজম করতে সাহায্য করে। তাই কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।

যাদের পাইলস আছে, তাদের জন্য নিয়মিত বেল খাওয়া উপকারী। এতে আছে ভিটামিন সি। ভিটামিন সি গ্রীষ্মকালীন বহু রোগবালাই দূরে রাখে। জন্ডিসের সময় পাকা বেল গোলমরিচের সঙ্গে শরবত করে খেলে উপকার পাওয়া যায়। নিয়মিত বেল খেলে কোলন ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা কমে। সর্দি হলে বেলপাতার রস এক চামচ খেলে সর্দি ও জ্বর–জ্বর ভাব কেটে যায়।

কামরাঙ্গার উপকারিতা

বাড়ির আনাচে-কানাচে এই কামরাঙ্গার গাছ লাগানো হয়ে থাকে সবুজ ও হলুদের মিশ্রনে বাহারি ফলটির বেশ চাহিদা রয়েছে আমাদের দেশে। আর বর্তমান সময়ে ফলটি বাজারে বেশ সহজলভ্য। অন্যান্য ফলের তুলনায় দামও অনেক কম। আর এই জন্য কামরাঙ্গা তে ঔষধি গুন সমৃদ্ধ যেমন পূরণ করবে ঠিক তেমনি শরীরের পুষ্টি প্রতিরোধ করে। কামরাঙ্গায় আয়রনের পরিমাণ পাকা কাঠাল, পাকা পেপে, লিচু, কমলালেবু ও ডাবের পানির চাইতে অনেক বেশি।

১. কামরাঙ্গা রুচি ও হজমশক্তি বাড়ায়। পাকা কামরাঙ্গা রক্ত ক্ষরণ বন্ধ করে। পেটের ব্যথায় কামরাঙ্গা খুব উপকারি। কামরাঙ্গায় আছে এলজিক এসিড। এটি অন্ত্রের ক্যান্সার প্রতিরোধ করে থাকে।

আরো পড়ুনঃ পেয়ারার উপকারিতা - রোগ উপশমে পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা

২. কামরাঙ্গা পুড়িয়ে ভর্তা করে খেলে ঠাণ্ডাজনিত সমস্যা থেকে মুক্তি মেলে। দীর্ঘদিনের জমাট সর্দি বের করে দিয়ে কাশি উপশম করে। শুকনো কামরাঙ্গা জ্বরের জন্য খুব উপকারি।

৩. কামরাঙ্গা ত্বককে মসৃণ করে কামরাঙ্গার পাতা ও ডগার গুঁড়া খেলে জলবসন্ত ও বক্রকৃমি নিরাময় করা যায় সহজেই। এছাড়াও কৃমির সমস্যা সমাধানে কামরাঙ্গা ফলও উপকারি।

৪. কামরাঙ্গা শীতল ও টক তাই ঘাম কফ ও বাতনাশক হিসেবে কাজ করে। তবে মনে রাখতে হবে অধিক পরিমাণে কামরাঙ্গা বা তার জুস খেলে ক্ষতির সম্ভাবনাও হতে পারে।

আপেলের উপকারিতা

  • আপেল স্মৃতি বিনষ্ট হওয়া থেকে রোধ করে
  • কোলেস্টেরল কমায়
  • ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
  • হাড়ের সুরক্ষা বলাই রাখে
  • শরীরে ফোলা ভাব কমাতে সাহায্য করে
  • আপেল দাঁত মজবুত করে
  • ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে
  • আপেল খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য ও ডায়রিয়া দূর হয়
  • লিভার সুস্থ রাখে
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
  • আপেল পেশীর ক্ষয় রোধ দূর করে
  • অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণে আপেল বেশ কার্যকরী

খালি পেটে আপেল খেলে হার্টও সুস্থ থাকে। আপেলে উপস্থিত ফাইবার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়াও আপেলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং পটাশিয়াম, এই উপাদানগুলো হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, পরিমাণ মতো আপেল খেলে ২০ শতাংশ স্ট্রোকের সম্ভাবনা কমে যাই। ২৫ গ্রাম আপেল অর্থাৎ চার থেকে পাঁচ টুকরো আপেল প্রতিদিন খেলে ৯ শতাংশ স্ট্রোকের সম্ভাবনা কমে।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

নিউ বাংলা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url