ইসলাম ধর্মে নারীর মর্যাদা সম্পর্কে জানুন

ইসলামে নারীর মর্যাদা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইসলাম নারীকে দিয়েছে পূর্ণ স্বাধীনতা তবে কিছু নিয়ম-কানুন রয়েছে যেগুলো মেনে চললে অবশ্যই ইহকালের সুন্দর জীবনযাপন এবং পরকালের জীবনে জান্নাত লাভ করা সম্ভব। আর তাই আজকে আমরা ইসলাম ধর্মে নারীর করণীয় এবং অধিকার সম্পর্কে জানব।

ইসলাম ধর্মে নারীর মর্যাদা সম্পর্কে জানুন

একজন নারী তার কতটা মর্যাদা ইসলাম দিয়েছে তা হয়তো আমরা অনেকেই জানিনা। ইসলাম ধর্ম কখনো অন্যের ধর্মকে খাটো করে দেখেনা। আর পবিত্র কোরআন মাজীদ একজন মানুষের পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা কিভাবে পরিচালনা করতে হয় তার সকল বিষয় সম্পর্কে বর্ণনা করা রয়েছে। তাহলে আজকে জানবো ইসলামে নারীর অধিকার কি এবং ইসলামে নারীর করণীয় মর্যাদা কতটুকু।

ইসলাম এর পূর্বে নারীরা ছিল অত্যন্ত অসহায়। একমাত্র বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (স) নারী জাতির প্রকৃত মুক্তি ও স্বাধীনতা দিয়েছেন। ইসলামের পূর্ব যুগকে জাহেলী যুগ বলা হয়। কিন্তু পরবর্তী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের দিয়েছেন পূর্ণ অধিকার ও মর্যাদা। আর জাহেলী যুগে মেয়েদেরকে জ্যান্ত দাফন করা হতো। পবিত্র কোরআনুল কারীম ও হাদিস শরীফে বর্ণিত রয়েছে যে ইসলামের গৌরবময়, কালজয়ী নারী মুক্তির সনদ ও সুনিশ্চিত অধিকারের বার্তা। এভাবেই ইসলাম সর্বপ্রথম নারীদের সমাজে স্বাধীন, সুস্থ ও সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার অধিকার প্রদান করে, এমনকি সূরা নিসা নামে পবিত্র কোরআনের একটি পূর্ণাঙ্গ সূরাই নাজিল হয়।

ইসলাম ধর্মে নারীর মর্যাদা

ইসলাম শান্তির ধর্ম আর তাই ইসলাম সবসময়ই সকল বিষয় সুখময় ও শান্তিময় করে তোলে। ইসলাম এসে নারীর উপর থেকে যত জাহেলী আচরণ তা পুরুষের ন্যায় ফিরিয়ে দিয়েছে। ইসলামে যেমন পুরুষের অধিকার ও কর্তব্য রয়েছে ঠিক তেমনি রয়েছে নারীর ও । আর তাই আল্লাহ তা'আলা বলেন-

হে মানবজাতি নিশ্চয় আমরা তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি পুরুষ ও নারী থেকে। আল্লাহ তাআলা আরও বলেন-যে মুমিন অবস্থায় নেক আমল করবে আমি তাকে পবিত্র জীবনদান করব। এবং তারা যা করত তার তুলনায় অবশ্যই আমরা তাদেরকে উত্তম প্রতিদান দেব।

ইসলাম নারীকে বিবাহের মত সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে পূর্ণ স্বাধীনতা ও অধিকার প্রদান করেছে। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : ‘প্রাপ্তবয়স্কা নারীকে তার সম্মতি ব্যতীত বিবাহ দেওয়া যাবে না। হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত, আসমা নাম্নী এক মহিলার স্বামী একটি পুত্র সন্তান রেখে ইন্তেকাল করেন। তখন মহিলার দেবর তাকে বিবাহের জন্য মহিলার পিতার নিকট প্রস্তাব পেশ করে। মহিলাও এ লোকটির সাথে তাকে বিবাহ দেওয়ার জন্য তার পিতাকে অনুরোধ করে। কিন্তু পিতা এতে সম্মত না হয়ে তাকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে অপর এক ব্যক্তির সঙ্গে বিবাহ দেন। অতঃপর মহিলা মহানবী (স) এর নিকট আগমন করে ঘটনার বর্ণনা করেন। তিনি মহিলার পিতাকে ডেকে এনে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেন। লোকটি অজোর করলো, ঘটনা সত্য। তবে আমি তাকে তার দেবরের চেয়ে উত্তম ব্যক্তির নিকট বিবাহ দিয়েছি। (সবকিছু অবগত হয়ে) রাসূলুল্লাহ (স) স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে মহিলার ইচ্ছানুযায়ী তার দেবরের সঙ্গে বিবাহ দেওয়ার জন্য তার পিতাকে নির্দেশ প্রদান করেন। (মুসনাদে ইমাম আযম আবু হানীফা, হাদিস নং ২৬৭)।

মা হিসেবে নারীর সম্মান

মা হিসেবে নারীর সম্মান অত্যন্ত এবং গুরুত্বপূর্ণ কেননা একজন মা তার সন্তানের জন্য জীবনের সবটুকু ভালোবাসা দিয়ে বড় করে। সন্তান হিসেবেও মায়ের প্রতি অনেক দায়িত্ব-কর্তব্য রয়েছে কারণ মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেস্ত। মা একজন শিশুকে ছোট থেকে লালন পালন করে চেয়েও ভালোবাসা দিয়ে বড় করে তোলে তাই ইসলাম মা হিসেবে নারীর সম্মান সবচেয়ে বেশি করেছে। মা হল পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর এবং বরকতময় একটি নাম।

কন্যা হিসেবে নারীর সম্মান

আমাদের প্রিয় নবী (সা.) বলেছেন, ‘মেয়েশিশু হল বরকত (প্রাচুর্য) ও কল্যাণের প্রতীক।’ হাদিস শরিফে আরও বর্ণিত আছে, ‘যার তিনটি, দুটি বা একটি কন্যাসন্তান থাকবে; আর সে ব্যক্তি যদি তার কন্যাসন্তানকে সুশিক্ষিত ও সুপাত্রস্থ করে, তার জান্নাত নিশ্চিত হয়ে যায়।

বোন হিসেবে নারীর সম্মান

ইসলাম নারীকে দিয়েছে তার বোনের মর্যাদা। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘কারও যদি কন্যাসন্তান ও পুত্রসন্তান থাকে আর তিনি যদি সন্তানদের জন্য কোনো কিছু নিয়ে আসেন, তবে প্রথমে তা মেয়ের হাতে দেবেন এবং মেয়ে বেছে নিয়ে তারপর তার ভাইকে দেবে।’ এছাড়াও জাহিলি যুগের সেই বর্বরতা থেকে মেয়েদেরকে রক্ষা করার জন্য ইসলাম পরিপূর্ণ শাসন ব্যবস্থা করে দিয়েছে হাদিস শরিফে আছে, বোনকে সেবাযত্ন করলে আল্লাহ প্রাচুর্য দান করেন।

স্ত্রী হিসেবে নারীর সম্মান

আমরা জানি ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে নারী ও পুরুষ একে অন্যের পরিপূরক। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে আরো বর্ণিত রয়েছে, ‘তারা তোমাদের আবরণস্বরূপ আর তোমরা তাদের আবরণ।’ (সূরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৮৭)। স্ত্রীর গুরুত্ব সম্পর্কে আমাদের মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘উত্তম স্ত্রী সৌভাগ্যের পরিচায়ক।’ (মুসলিম শরিফ)। তিনি আরও বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে সে–ই উত্তম, যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম।’ (তিরমিজি)। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের সঙ্গে সদাচরণ করো।’ (সূরা-৪ নিসা, আয়াত: ১৯)। কোরআনে আরেক জায়গায় বলা হয়েছে, ‘নারীর ওপর যেমন পুরুষের অধিকার রয়েছে, তেমনি রয়েছে পুরুষের ওপর নারীর সমান অধিকার।’ (সূরা-২ বাকারা, আয়াত ২২৮)।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

নিউ বাংলা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url