নবীদের জীবন কাহিনী সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

 

প্রিয় পাঠক আজকে এমন একটি আর্টিকেল লিখতে চলেছি যেটি অবশ্যই সুন্দর ও এবং আপনাদের খুবই ভালো লাগবে। আজকে নবীদের জীবন কাহিনী সম্পর্কে আপনাদের মাঝে সঠিক তথ্য দিয়ে সাহায্য কর। মহান আল্লাহতালা যুগে যুগে অনেক নবী ও রাসূল পাঠিয়েছেন। মহান আল্লাহতালা মানব জাতিকে হেদায়েতের জন্য এ সকল নবী ও রাসূল প্রেরণ করেছেন।

নবীদের জীবন কাহিনী সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

আজকে আমরা নবীদের জীবন কাহিনী সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো। প্রতিটা মুসলমান কোন না কোন নবীর উম্মত বা সাহাবী ছিলেন। আমাদের আদি পিতা হযরত আদম আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুরু করে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত যত নবী ও রাসুল এসেছেন শুধুমাত্র তাদের উম্মত ও সাহাবীদের হেদায়েতের জন্য। তাহলে আর দেরি না করে চলুন নবীদের জীবন কাহিনী সম্পর্কে আলোকপাত করি।

হযরত নূহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম

আমাদের আদি পিতা হযরত আদম আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে নূহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত মাত্র 10 শতাব্দীর ব্যবধান ছিল। যখন কুসংস্কারের মধ্যে পতিত হয় তখন মহান আল্লাহ তায়ালা হযরত নূহ আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নবী ও রাসূল হিসেবে প্রেরণ করেন। আর তিনি তার ইসলামের দাওয়াতী কাজ সাড়ে 900 বছর অতিক্রম করেছিলেন। কিন্তু এত বছর দাওয়াতি কাজ অতিক্রম হওয়ার পরও তার কওম তাকে প্রত্যাখ্যান করেন। যার ফলে আল্লাহর গজবে তারা নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। কিন্তু এরপরে আরো কয়েকটি কওম আল্লাহর অবাধ্যতার কারণে ধ্বংস করে দেয়। এভাবে পৃথিবীতে যুগে যুগে ছয়টি জাতির ধ্বংসপ্রাপ্তর কথা কুরআনে প্রমাণ পাওয়া যায়।

নূহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরিচয়

মানবজাতির দ্বিতীয় পিতা হিসাবে নূহ আঃ কে আখ্যায়িত করা হয়। নূহ ছিলেন আমাদের আদি পিতা আদম আলাইহিস সাল্লাম এর দশম কিংবা অষ্টম অধস্তন পুরুষ। আর তিনিই ছিলেন পৃথিবীতে প্রথম রাসুল। আমরা অনেকেই জানি যে নূহ আলাইহিস সালামের চারটি পুত্র সন্তান ছিল তারা হলেন হাম, সাম, ইয়াফিজ, ইয়াম বা কেন’আন। আর এইচ চার পুত্রের মধ্যে তিনজন কোরআনের প্রতি ঈমান আনলেও একজন কোরআনের প্রতি ঈমান না আনার কারণে কাফের হয়ে যায় এবং প্লাবনে ডুবে মারা যায়। নূহ আঃ এর সময় তার দাওয়াতী কাজে হাতে গোনা মাত্র কয়েকজন ঈমানদার ব্যক্তি সারা দেন এবং তারাই প্লাবনের সময় নাজাত পায়।

নূহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্লাবন শেষে তার বংশধরদের ভিতর কেবল তার তিনটি পুত্র সন্তান হাম, সাম, ইয়াফেছ বেঁচে ছিলেন। একটি আয়াতে রাসুল সাঃ ব্যক্ত করেন সাম হলেন আরবের পিতা, হাম হাবশার পিতা, এবং ইয়াফেছ ছিলেন রোমকদের অর্থাৎ গ্রীক সম্প্রদায়ের পিতা। ইবনে আব্বাস বলেন, পরবর্তী মানবজাতি তার সবই হলো নূহের বংশধর। এদিকে শাম ছিলেন নূহের বড় সন্তান এবং আরবদের পিতা। আর শ্যামের বংশধর এর মধ্যে ছিলেন হযরত ইব্রাহিম, ইসমাইল, ইসহাক, এবং সর্বশেষ ইসমাইলের বংশধর।

নূহ আলাইহিস সালামের জীবন থেকে শিক্ষণীয় বিষয়

প্রথম রাসুল নূহ আঃ এর সত্যতার বিরুদ্ধে যে পাঁচটি আপতি তোলা হয়েছিল সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ রাসুল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর সভ্যতার বিরুদ্ধেও ওই একই অভিযোগ গুলি তোলা হয়েছিল।। নূহ আঃ যেমন দীর্ঘকাল যাবতীয় জাতির পক্ষ হতে অনেক নির্যাতন ভোগ করার পরও তাদের হেদায়েতের ব্যাপারে কখনো নিরাশ হতেন না। এছাড়া নবী পরিবারের সদস্য হওয়া সত্বেও ঈমান না থাকার কারণে নূহের স্ত্রী ও পুত্র যেমন নাজাত পাওয়া থেকে ব্যর্থ হয়েছিল ঠিক তেমনি এ যুগেও সেটি হওয়া সম্ভব। এজন্য অবশ্যই আমাদের ঈমানের পথে চলা এবং সঠিক ও সত্য পথ প্রদর্শন করা। এই জন্য কাফির ও মুশরিক সন্তান বা কোন নিকট আত্মীয়ের মাগফিরাতের জন্য আল্লাহর নিকটে দোয়া প্রার্থনা করা জায়েজ নয়।

ঈমানী সম্পদ অতি বড় একটি অতুলনীয় সম্পদ। কারণ আল্লাহর দরবারে ঈমানদারদের মর্যাদা সবার চেয়ে উপরে থাকবে কিন্তু দুনিয়াবী জীবনে সব সময় দ্বীনদার ব্যক্তি গরীব হয়। ঈমানহীন সমাজ যেমনই নেতা ও ধনী লোকদের খুশি করার জন্য ঈমানদার গরীবদের দূরে সরিয়ে দেওয়া যাবে না। বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সর্বদা আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করতে হবে। নবী রাসুল এবং তাদের অনুসারী সকল ঈমানদার ব্যক্তিদের অনুসরণ করা উচিত।

হযরত ইসহাক আলাইহি ওয়াসাল্লাম

হযরত ঈসা হক ছিলেন আমাদের জাতির পিতা হযরত ইব্রাহিম আলাই সালাম এর প্রথম স্ত্রী সারাহ একমাত্র পুত্র সন্তান। এবং তিনি ছিলেন হযরত ইসমাইল আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাত্র ১৪ বছরের ছোট। আর ঠিক সেই সময় সারাহর বয়স ছিলেন ৯০ বছর এবং ইব্রাহিম এর বয়স ছিল 100 বছর। মহান আল্লাহ তায়ালা ইসমাইলকে দিয়ে যেমন মক্কার জনপদে তাওহীদের আলোতে উদ্ভাসিত করেছিল ঠিক তেমনি ইসাহককে নবুয়াত দান করে তার মাধ্যমে সামের বিস্তীর্ণ এলাকায় আবাদ কাজ শুরু করেছিলেন।

হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম তার পুত্রকে বিয়ে দিয়েছিলেন রাফকা বিনতে বাতওয়াইল এর সঙ্গে। কিন্তু তিনিও বন্ধা ছিলেন। যার ফলে ইব্রাহিমের খাস দোয়ার বরকতে তিনি সন্তান লাভ করেন এবং তার গর্ভে ঈছ এবং ইয়াকুব নামের দুইটি পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করেন। এবং এই দুই সন্তানের মধ্যে ইয়াকুব নবী হন। এরপরে ইয়াকুবের বংশধর হিসেবে বনী ইসরাইলের হাজার হাজার নবী পৃথিবীতে তাওহীদের আলোতে আলোকিত করেন। কিন্তু ইহুদি নেতাদের হট কারী তার কারণে তারা আল্লাহর গজবে পতিত হয় এবং অভিশপ্ত জাতি হিসেবে নিন্দিত হয়। এবং এটি কেয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।

ইসাহক মাত্র 180 বছর হায়াত পায়। এবং তার মৃত্যু হয় কেন’আনে এরপর ইসহাকের পুত্রদ্বয়ের মাধ্যমে হেবরনে পিতা ইব্রাহিমের কবরের পাশে সমাধিত করা হয়। আর এই স্থানটি এখনকার সময়ে আল খালিল নামে পরিচিত।

হযরত ইসমাইল আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনী

আমরা জানি যে হযরত ইসমাইল আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন ইব্রাহিম আঃ এর এর পুত্র এবং হাজরার গর্ভজাত একমাত্র সন্তান। ওই সময়ে ইব্রাহিমের বয়স ছিল প্রায় ৮৬ বছর এবং শিশু বয়সে তাকে ও তার মাকে আল্লাহর নির্দেশে মক্কার নির্জনভূমিতে রেখে আসে। আর সেখানে ইব্রাহিমের দোয়ার বরকতে আল্লাহর রহমতে ইসলামের পায়ের আঘাতে জমজম কূপের সৃষ্টি হয়। আর সেই পানি হযরত ইসমাইল এবং মা হাজেরা পান করেন আস্তে আস্তে সেখানে আবাদী কাজ শুরু করে। কোন এক সময় সেই পাশ দিয়ে ইয়েমেনের ব্যবসায়ী কাফেলা বনু যুরহুম গোত্র পাশ যাচ্ছিল এবং হাজারার হাতে ঈমান গ্রহণ করে এবং সেখানে আবাদি কাজ শুরু করে। মাত্র ১৪ বছরের বয়সে আল্লাহর হুকুমে মক্কার অতি দূরে মিনা প্রান্তরে সংঘটিত হয় বিশ্ব ইতিহাসে এক বিস্ময়কর ত্যাগ এবং মহিমান্বিত কোরবানির ঘটনা।

পিতা ইব্রাহিম কর্তৃক পুত্র ইসমাইলকে সহজ কুরবানীর উক্ত ঘটনায় শত বর্ষীয় পিতা ইব্রাহিমের ভূমিকা যাই থাকুক না কেন ১৪ বছরের তরুণ ইসমাইল এর ঈমান এবং আত্মত্যাগের একমাত্র নমুনা হিসেবে ছিলেন তিনি নিজেই। তিনি শেষ তাই নিজেকে কোরবানির জন্য নিজেকে সমর্পণ করল। আর এই কাজ দেখে ইসমাইল নবীর না হয়েও নবীপুত্র হয়ে আল্লাহ ভক্তি এবং জিরো হিমালয়ের পরিচয় ফুটে উঠেছিল তার কথা ও কর্মে। আমরা অনেকেই নবীদের জীবন কাহিনী শুনতে ভালোবাসি তাই এই পোস্টটি আপনাদের জন্য অত্যন্ত কল্যাণকর।

ইসমাইলের মাতা হাজেরার মৃত্যুর পর ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম যখন ইসমাইলকে দেখতে যান তখন তার স্ত্রীকে কুশলাদি জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, আমরা খুব অভাবে এবং কষ্টের মধ্যে আছি জবাবে তিনি বলেন তোমার সামি এলে তাকে আমার সালাম দিয়ে বলো যেন তিনি যেন তার ঘরে চৌকাঠ পাল্টে ফেলেন। এরপরে যখন ইসমাইল বাড়ি ফিরে তখন তার স্ত্রী তাকে ঘটনাটি খুলে বলে এবং পক্ষান্তরে ইসমাইল আলাইহিস সালাম ঘটনাটি বুঝতে পেরে বলেন তিনি আমার আব্বা ছিলেন। এবং তিনি আমাকে তালাক দেওয়ার কথা বলে গেছেন এবং নতুন আরেকটি বিয়ে করতে বলেছেন। এর কিছুদিন পরে আবার পিতা ইব্রাহিম আলাইহি ওয়াসাল্লাম দরজার বাহির থেকে সালাম দিয়ে তাদের খোঁজখবর নিতে চাইলেন এবং ভেতর থেকে ইসমাইল আঃ এর স্ত্রী প্রশ্নের জবাবে বলেন আমরা খুবই ভালো ও সফলতার মধ্যে আছি এবং তিনি আল্লাহর প্রশংসা করেন। ইব্রাহিম তাদের সংসারে বরকতের জন্য আল্লাহর নিকট পার্থক্য করলেন অতঃপর তাকে বললেন তোমার স্বামী ঘরে ফিরলে তাকে তার দরজার চৌকাঠ যেন ঠিক রাখে এবং মজবুত রাখে। এরপর যখন ইসমাইল আলাইহিস সালাম বাসায় আসে তখন তার স্ত্রী ঘটনাটি উল্লেখ করে পক্ষান্তরে ইসমাইল আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন তিনি আমার আব্বা এবং তিনি তোমাকে সারা জীবন স্ত্রী হিসেবে বহাল রাখার নির্দেশ দিয়েছে। এরপর কিছুদিন অতিবাহিত হওয়ার পরে আবার ইব্রাহিম আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইসমাইল আলাইহি সালামের কাছে আসে এবং পিতা পুত্র উভয়ে মিলে কাবা ঘর নির্মাণ করে।

হযরত ইয়াকুব আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জীবনী

ইসহাক আলাইহিস সাল্লাম এর জমজ দুই পুত্র ঈছ এবং ইয়াকুব। ইয়াকুব ছিলেন ছোট ছেলে এবং তিনি পরবর্তীতে নবী হন। তার অপর নাম ছিল ইসরাইল। যার অর্থ হল আল্লাহর দাস। একমাত্র আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ ও ইয়াকুবের দুটি করে নাম ছিল। ইয়াকুব তার মামার বাড়ি ইরাকের ইরান যাবার পথে রাত হয়ে গেলে কেন আনের অদূরে একটি স্থানে একটি পাথরের উপরে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েন। এরপরে তিনি দেখেন যে একদল ফেরেস্তা সেখান থেকে আসমানে ওঠা নামা করছে এবং এরই মধ্যে আল্লাহ তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন-

অতিসত্বর আমি তোমার ওপরে বরকত নাযিল করব। তোমার সন্তান-সন্ততি অধিক করে দেব তোমাকে ও তোমার পরে তোমার উত্তরসূরিদেরকে এই মাটির মালিক বানিয়ে দিব। তিনি ঘুম থেকে উঠে খুশি হয়ে মানত করলেন তিনি নিরাপদে নিজ পরিবারের কাছে ফিরে আসতে পারেন তাহলে এই স্থানে তিনি একটি ইবাদত খানা প্রতিষ্ঠা করে দিবেন এবং আল্লাহ তাকে যা রুজি দেবেন তার দশমাংশ আল্লাহর পথে ব্যয় করবেন। নবীদের জীবন কাহিনী যেমন সুন্দরময় তেমনি অনেক কষ্টের। প্রত্যেকটা নবী রাসুল অনেক কষ্ট করেছে। তাদের দাওয়াতি কাজ কখনোই সুখের ছিল না। এরপরে ইয়াকুব আলাইহি সাল্লাম ওই স্থানের পাথরটির ওপরে একটি চিহ্ন এঁকে দিলেন যাতে করে পরবর্তী সময়ে খুব সহজেই সেই পাথরটি চিনতে পারে। এবং তিনি ওই স্থানটি নাম রাখলেন আল্লাহর ঘর বর্তমান সময়ে সেই স্থানকে বায়তুল মুকাদ্দাস নামে অবহিত করা হয়। যা পরবর্তীতে প্রায় এক হাজার বছর পরে হযরত সোলায়মান আলাইহি ওয়াসাল্লাম পূর্ণ নির্মাণ কাজ করেন।

মূলত এটাই ছিল বায়তুল মুকাদ্দাস এর মূল ভিত্তি বা ভূমি যা কাবা গৃহের ৪০ বছর পরে ফেরেশতাদের দ্বারা নির্মিত হয়। এরপর সেই জায়গাটি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার কারণে আল্লাহ তা'আলা ইয়াকুব আলাইহিস সালামকে স্বপ্নে দেখান এবং তার হাতে সেখানে পুনরায় সেটি ইবাদত খানা তৈরি করা হয়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

নিউ বাংলা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url