গরু মোটাজাতকরণের পদ্ধতি - গরু মোটাতাজাকরণ দানাদার খাদ্য তালিকা

 

আমাদের দেশে গবাদি পশু মোটাজাতকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। এর কারণ হলো আমাদের দেশে মাংসের চাহিদা থাকলেও তুলনামূলকভাবে উৎপাদন অনেক কম। আজকে গরু মোটাতাজাকরণের পদ্ধতি সম্পর্কে আপনাদের সামনে তুলে ধরব। এবং আজকের আর্টিকেলে জানাবো কিভাবে অল্প সময়ে গরু মোটাতাজাকরণের পদ্ধতি অবলম্বন করা যায়।

গরু মোটাজাতকরণের পদ্ধতি - গরু মোটাতাজাকরণ দানাদার খাদ্য তালিকা

গরু মোটাজাতকরণেরপদ্ধতির সাথে অনেক কিছুই জড়িত যেমন কর্মসংস্থান, গবর উৎপাদন করা, চামড়া উৎপাদন, জৈব সার তৈরি এর সকল কিছুই এই গবাদি পশুর সাথে সম্পৃক্ত। তাই দেরি না করে চলুন গরু মোটাজাতকরণের পদ্ধতি ও গরু মোটাতাজাকরণ দানাদার খাদ্য তালিকা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই।

পোস্ট সূচিপত্রঃ গরু মোটাজাতকরণের পদ্ধতি - গরু মোটাতাজাকরণ দানাদার খাদ্য তালিকা

গরু মোটাজাতকরণের পদ্ধতি

আপনারা অনেকেই জেনে থাকবেন যে গরু মোটাজাতকরণের পদ্ধতি হিসেবে সর্বপ্রথম গরু নির্বাচন করতে হয় এরপরে ভালো খামারের প্রয়োজন হয়। এরপরে গরু কিনা হয়ে গেলে আপনাকে অবশ্যই কয়েকটি ধাপ অতিক্রম করতে হবে।

প্রধানত ধাপ গুলো হলঃ

  • গরু নির্বাচন
  • বাসস্থান নির্বাচন
  • গরু কৃমি মুক্ত করা
  • গরু বাজারজাতকরণ

গরু নির্বাচন

কেউ যদি চায় গরু দুধের জন্য কাজ শুরু করবে তাহলে তার জন্য বাজার থেকে নতুন সুন্দর দেখে গরু ক্রয় করা। আর যদি মাংস তৈরির জন্য গরু পালন করে থাকে তাহলে অবশ্যই খামার থেকে কোন স্বাস্থ্যবান ছোট বাছুর ক্রয় করা।

বাসস্থান নির্বাচন

গরুর বাসস্থান তৈরির জন্য অবশ্যই খোলামেলা এবং উঁচু জায়গায় গরুর ঘর তৈরি করতে হবে। আর এই গরুর ঘরের উচ্চতার মাপ কমপক্ষে 10 থেকে 12 ফুট হতে হবে। এরপরে মেঝেতে এক ফুট বালু দিয়ে ইট বিসিয়ে মুসলিম করতে হবে এবং বালু ও ইটের গুঁড়া দিতে হবে। গরুর সামনের দিকে খাবার চারি এবং পিছনের দিকে মল ও বজ্র নিষ্কাশনের জন্য ব্যবস্থা করতে হবে। সর্বশেষ ঘরের চারপাশে নেট বা চটের পর্দা দিতে হবে। এর মাধ্যমে অতিবৃষ্টি রক্ষা করবে এবং অতি ঠান্ডা সময়ও ব্যবহার করা যাবে।

আরো পড়ুনঃ ছাগল পালন পদ্ধতি - দুগ্ধবতী ও গর্ভবতী ছাগলের খাদ্য তালিকা

গরু কৃমি মুক্ত করা

গরুর খাদ্যনালীতে সাধারণত বিভিন্ন ধরনের কৃমি বসবাস করে। আর এই কৃমি গরুর শরীরে বসবাস করলে সকল ধরনের পুষ্টি খেয়ে ফেলে এবং গরু মোটা জাতকরণের পথে বড় বাধা সৃষ্টি করে। যার ফলে গরু মোটা জাত করন করা সম্ভব হয় না। এইজন্য আপনাকে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে।

গরু বাজারজাতকরণ

গরুকে সঠিক মাত্রায় খাদ্য খাওয়ার পরে মোটা জাতকরণ করে সঠিক সময়ে ভালো মূল্য পাওয়ার জন্য সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উল্লেখযোগ্য একটি বিষয়। আমাদের বাংলাদেশের মাংসের জন্য বিক্রয় যোগ্য গবাদি পশুর বাজার মূল্য মৌসুম অনুযায়ী ওঠানামা করে। আর এই জন্য গরু চাষীদের উচিত হবে যে সময় গরুর মূল্য ওঠানামা করে বা কমে যায় সেই সময় বিক্রি না করে যখন মূল্য বৃদ্ধি পাবে তখন গরু বাজারজাতকরণ করা।

গরু মোটাতাজাকরণ দানাদার খাদ্য তালিকা

গরু মোটাজাতকরণের পদ্ধতি হিসেবে দানাদার খাদ্য তালিকা অন্যতম। গরু মোটা জাতকরণ ব্যবসায়ের সাফল্য গবাদি গরুর ওজন বাড়ানো এবং উচ্চ মানের গরুর মাংস বৃদ্ধি করা সকল কিছু খামারির অর্থের ওপর নির্ভর করে। আর তাই গরু মোটা জাতকরণ দানাদার খাদ্য তালিকা হিসেবে বিভিন্ন খাদ্য বাজারে পাওয়া যায়। যেমনঃ বার্লি, ভূষি, গম, ভুট্টার কুড়া, মসুরের কুড়া এই সকল খাদ্য বৃদ্ধির জন্য বেশ উপকারী। একটি গরু কি পরিমান খাদ্য গ্রহণ করবে তা গরুর ওজন ও বয়সের উপর নির্ভরশীল।

এখনকার সময়ে গরু মোটাজাতকরণ দানাদার খাদ্য তালিকা হিসেব করলে খাদ্য মোট খরচের প্রায় 60 থেকে 70 ভাগ ব্যয় হয়। তাই এর খরচ স্থানে ভাবে অনেক কমানো সম্ভব। আপনি যদি গরুর প্রতিদিনের খাদ্য তালিকা অনুসরণ করেন তাহলে স্বল্প খরচে গরু মোটাজাতকরণ সম্ভব। গরুর খাদ্য প্রধানত দুই প্রকার হয়ে থাকে, যথাঃ  ১. আঁশ জাতীয় খাবার  ২. দানাদার খাবার তাহলে চলুন দেখে নেওয়া যাক গরুর খাদ্য তালিকা সমূহগুলো

১. শুকনো খড়ঃ দুই বছরের গরুর জন্য শতকরা ৩ ভাগ এবং এর অধিক বয়স হওয়া গরুর জন্য শতকরা দুই ভাগ শুকনো খড় জাতিতে কেটে চিটাগোর মিশিয়ে পানিতে ভিজিয়ে প্রতিদিন খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

২. কাঁচা ঘাসঃ প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় 6 থেকে 8 কেজি সবুজ দাদা ঘাস বা শস্যজাতীয় তারা উদ্ভিদের উপজাত দ্রব্য খাওয়ানো উচিত। এক্ষেত্রে গরু খুবই অল্প সময়ে স্বাস্থ্যের আকার বৃদ্ধি পায়। এখন কয়েক ধরনের সবুজ ঘাস পাওয়া যায় যেমনঃ ভাদাল ঘাস, দুবলার ঘাস, নেপিয়ার, পাড়া, খেসারী, মটর, দূর্বা ইত্যাদি

৩. দানাদার খাদ্যঃ প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় অবশ্যই জানাজার খাদ্য থাকতে হবে। গরু প্রধানত দানাদার খাদ্য খাওয়ার ফলে স্বাস্থ্যের উন্নতি এবং খুব তাড়াতাড়ি বেড়ে ওঠে। নিচে দানাদার 100 কেজি খাবারের তালিকা দেখানো হলোঃ

গমের ভুসি 40 কেজি, এবং চালের গুড়া ২৩.৫ কেজি, ডালে ভুসি 15 কেজি, সরিষার খোল ২০ কেজি, লবণ ২ কেজি এছাড়া বাজারে এখন বিভিন্ন ভিটামিন মিনারেল মিশ্রিত উপাদান পাওয়া যায়। তাছাড়া বিভিন্ন রকমের ইউরিয়া মোলাসেস বক ব্যবহার করা যায়।

হরমোনের ব্যবহার ছাড়া গরু মোটা জাতকরণ

অনেকেই ভাবে অতি অল্প সময়ে কিভাবে গরু মোটাজাতকরণের পদ্ধতি জানা যায়। কিন্তু সঠিক জ্ঞানের অভাবের অনেক গরু পালনকারী ব্যবসায়ী লস খেয়ে বসে আজকে হরমোন ব্যবহার ছাড়া গরু মোটা জাতকরণ সম্পর্কে জানাবো। আপনাদের একটি বিষয় অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে যে কোন ভাবে ইনজেকশন বা কোন প্রকার গ্রোথ হরমোন ব্যবহার করে গবাদি পশু মোটাজাতকরণের পদ্ধতি অবলম্বন করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

এখনকার সময়ে কোন প্রকার এন্টিবায়োটিক এর ব্যবহার ছাড়াই স্বাভাবিক এবং জৈব পদ্ধতিতে গরু মোটা জাতকরণ করা সম্ভব। কিন্তু এর জন্য আপনার সমগ্র জ্ঞান থাকতে হবে তা না হলে অন্যত্র থেকে জেনে নিতে হবে। আপনি একটু সতর্কতা অবলম্বন করলেই এই কাজটি করতে পারবেন। আর এর জন্য দরকার শুধু কিছু নিয়ম কারণ মেনে চলা। অনেকেই অধিক মাংস উৎপাদনের জন্য দুই থেকে তিন বছর বয়সের জীর্ণশীর্ণ গরুকে একটি বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে খাদ্য সরবরাহ করে কিছুদিনের মধ্যে স্বাস্থ্যবান গরুতে রূপান্তরিত করার প্রক্রিয়াকে গরু মোটা জাতকরণের পদ্ধতি বলে।

আরো পড়ুনঃ বেগুন চাষ পদ্ধতি - বেগুনের ঢলে পড়া রোগ সম্পর্কে জানুন

আর এই সকল প্রক্রিয়ার অন্যতম কারণ হলোঃ দারিদ্রতা বিমোচন করা, স্বল্প সময়ে অধিক মুনাফা অর্জন, প্রাণিজ আমিষের ঘাটতি পূরণ করা, বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি ইত্যাদি। গরুর বয়সের ওপর ভিত্তি করে সাধারণত তিন থেকে চার মাসের মধ্যে গরু মোটা জাতকরণ করা সম্ভব হয়। অনেক ক্ষেত্রে এর সময় বহুগুণ বেড়েও যেতে পারে। অনেক সময় আমাদের দেশে দেখা যায় কোরবানির ঈদের সময় পাঁচ থেকে ছয় মাস আগেই গরুকে নানা ধরনের মোটাজাতকরুন পদ্ধতি অবলম্বন করতে। কিন্তু আপনি চাইলে কোন রকম হরমোন ব্যবহার ছাড়া গরু মোটাজাতকরণ করতে পারবেন তার জন্য কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে যেমনঃ

১. গরুকে অবশ্যই শুষ্ক ও উঁচু জায়গায় রাখতে হবে যাতে করে খামার এলাকায় কোনভাবে পানি জমে না থাকে

২. খোলামেলা ও প্রচুর আলো বাতাস আছে এমন জায়গায় খামার স্থাপন করা

৩. খামারে কাঁচামাল সরবরাহ এবং উৎপাদন দ্রব্যাদি বাজারজাতকরণের জন্য সুন্দর যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকা

৪. পানি এবং বিদ্যুৎ সরবরাহের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা

৫. সর্বশেষ সুষ্ঠু পয়নিষ্কাশন নিশ্চিত করতে হবে এবং সামনে খাবার জায়গা এবং পিছনে মলত্যাগের জায়গা রাখতে হবে। এছাড়া উপরোক্ত খাদ্য খাওয়ার মাধ্যমে গরু মোটাজাতকরণ সম্ভব।

গরু মোটাতাজাকরণ পাউডার

এখনকার সময়ে বাজারে গরু মোটাতাজাকরণ করার জন্য বিভিন্ন পাউডার বিক্রি করছে। আর এই সকল পাউডার ব্যবহারের ফলে গরু সহজেই মরে যাতকরণ করা সম্ভব হচ্ছে। গরু মোটাতাজাকরণের পদ্ধতি হিসেবে বেছে নিয়েছে। তাহলে চলুন দেরি না করে কয়েকটি গরু মোটাতাজাকরণের পাউডার সম্পর্কে জানি।

  • sk-db
  • prema fat vit
  • হুই প্রোটিন
  • renavit plus
  • rena breeder powder
  • renamox tablet
  • tylo p.c

গরু মোটাতাজাকরণ ভিটামিন

বর্তমান সময়ে স্বল্প খরচে কিভাবে গরু মোটাজাতকণের পদ্ধতি অবলম্বন করা যায় সেদিকে বাড়তি লক্ষ্য রাখে। এবং এরই ফলে গরু মোটাজাতকরণের জন্য নানারকম ভিটামিন শরীরের পুশ করে থাকে। তাহলে চলুন কয়েকটি গরু মোটা জাতকরণ ভিটামিন এর নাম সম্পর্কে জানি।

১. রেনাভিট ডিবি

২. কেলফসটনিক

৩. ডিবি ভিটামিন

৪. ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ইনজেকশন

৫. ভিটামিন এ, ডি, ই ইনজেকশন

৬. জিংক ভিট

৭. হিমোভিট

৮. রুমাল প্লাস

৯. ফস ক্যালসিডি

গরু মোটাতাজাকরণ ঔষধ

গরু মোটাতকরণের কিছু ঔষধ সমূহ নিচে দেওয়া হল যা আপনি খুবই উপকৃত হবেন। তাহলে আর দেরি না করে গরু মোটা জাত করনের ঔষধ সম্পর্কে সকল সঠিক তথ্য দেখে নিন।

  • প্রোবায়োটিক
  • বায়োলাক
  • এসিলাক প্লাস
  • লিভা ভেট
  • লিভাটন
  • রেনালিভ
  • অ্যামাইনোভিট প্লাস ভিড
  • লিভার টনিক
  • হিমোভিট
  • জিংক প্লাস
  • বভিভিট

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

নিউ বাংলা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url